মৃতপ্রায় নদীতে পোঁতা হয়েছে বাঁশ, পড়ছে আবর্জনা
Saraswati River

সরস্বতীতে বিয়ের প্যান্ডেল

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া! সরস্বতী নদী এমনিতেই মৃতপ্রায়। অথচ, তার বুকেই বাঁশ পুঁতে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে!

Advertisement

সুব্রত জানা

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩২
Share:

দখল: এ ভাবেই নদীর বুকে বাঁশ পুঁতে তৈরি হয়েছে বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল। —নিজস্ব িচত্র

এ যেন গোদের উপর বিষফোঁড়া!

Advertisement

সরস্বতী নদী এমনিতেই মৃতপ্রায়। অথচ, তার বুকেই বাঁশ পুঁতে বিয়ের প্যান্ডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে!

হাওড়ার সাঁকরাইলের বানুপুর-২ পঞ্চায়েতের মধ্য ঝোরহাটে গেলেই দেখা যাচ্ছে ওই প্যান্ডেল। ওই এলাকার বাসিন্দা, পেশায় প্রোমোটার তরুণ দাসের ছেলের বিয়ে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি। তাঁদের বাড়িটি নদীর পাশেই। কিন্তু ছেলের বিয়ের জন্য এ ভাবে নদী ‘দখল’ করা নিয়ে পরিবেশপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ। এলাকার লোকজনও ভাল ভাবে নিচ্ছেন না তরুণের এ হেন আচরণ। অবশ্য তাঁরা প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, তরুণ এক তৃণমূল নেতার ‘ঘনিষ্ঠ’। অভিযোগ, ওই বিয়েবাড়ি থেকে নদীতে আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে রোজই। কিন্তু পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের হুঁশ নেই।

Advertisement

নদীর বুকে কোনও স্থায়ী বা অস্থায়ী নির্মাণই বেআইনি বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদীর পটভূমিতে ওই কাজ করা যায় না। সরস্বতীকে এ ভাবে ধ্বংস করা চরম অন্যায় কাজ। রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকায় নদীটির করুণ পরিণতি হচ্ছে। এতে নদীর সঙ্কট অর্থাৎ সভ্যতারও সঙ্কট।’’

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তরুণের জবাব, ‘‘বিয়েবাড়ি হয়ে গেলে প্যান্ডেল খুলে ফেলা হবে। যদি নদীতে আবর্জনা পড়ে থাকে, সেগুলো সব পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।’’ ওই প্রোমোটার সাঁকরাইলের যে তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সেই তপন পালও বলেন, ‘‘কিছু বাঁশই তো পোঁতা হয়েছে। তাতে নদীর কী ক্ষতি হবে?’’

গঙ্গা ছাড়াও আর যে নদী একসময়ে হাওড়া ও হুগলি— এই দুই জেলার সমৃদ্ধির কারণ হয়ে উঠেছিল, এখন সেই সরস্বতী গতিহারা। কচুরিপানায় আবদ্ধ। কোথাও নদীর অংশ দখল করে দাঁড়িয়ে কংক্রিটের নির্মাণ, কোথাও তার ‘ডাস্টবিন’-এর চেহারা। যেখানে জলের দেখা মেলে, রং নিকষ কালো। হুগলির ত্রিবেণীর গঙ্গা থেকে বেরিয়ে ৭৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে হাওড়ার সাঁকরাইলে গিয়ে সরস্বতী ফের ওই নদীতেই মিশেছে। কিন্তু অনেক জায়গাতেই নদীটির কার্যত কোনও অস্তিত্ব নেই। ইতিহাস বলে, বহু শতাব্দী আগে এই নদী ছিল অন্যতম বাণিজ্যপথ। সরস্বতীর দু’ধারে অনেক মন্দির আছে। বণিকেরাই বাণিজ্য করতে যাওয়ার সময় ওই সব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, এমনটাই ধারণা। সেই নদী এখনও মুছে যায়নি।

কিন্তু যে হারে নদীটির উপরে ‘অত্যাচার’ হয়, তাতে সংস্কার না হলে নদীটি অদূর ভবিষ্যতে মুছে যাবে, এমনটাই মনে করেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁরা বলছেন, ওই বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল তৈরি এবং তার আবর্জনা নদীতে ফেলা, সেই ‘অত্যাচারের’ তালিকায় আরও একটি সংযোজন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আবর্জনা ফেলার জন্য নদী দূষণ হলেও তরুণ নির্লিপ্ত। উনি কবে পরিষ্কার করাবেন, তার ঠিক নেই। অথচ, নদীতে স্রোত না-থাকায় আবর্জনা পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশা-মাছিও বাড়ছে। আন্দুলের বাসিন্দা, পরিবেশকর্মী শুভাশিস বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের অত্যাচার ও সরকারের উদাসীনতার জন্য সরস্বতী নদীর আজ এই অবস্থা। স্থানীয় প্রশাসন যদি ঠিকঠাক নজর রাখে তা হলে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বা নদী দখল হয় না।’’

আশার কথা, সাঁকরাইলের বিডিও সন্দীপ মিশ্র ওই প্যান্ডেল করে কী ভাবে নদী ‘দখল’ হয়েছে, তা দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। বানুপুর-২ পঞ্চায়েতের প্রধান রিতা দাসও বলেছেন, ‘‘নদীতে আবর্জনা ফেলা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যাবে না। কেন নদীর উপর বিয়েবাড়ির প্যান্ডেল হল তা-ও খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’

উঠছে নদী ‘দখলের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন