রক্তাক্ত যাত্রী, থামল না বাস

সামনের মিনিবাসের যাত্রীরা দেখেন, চালকের সিটের পিছনে জানলার পাশে বসা এক বৃদ্ধের ডান হাতের কনুইয়ের চামড়া-মাংস কেটে ঝুলছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে জামা। ওই বৃদ্ধ-সহ অন্য যাত্রীরা চালককে বলেন, দ্রুত কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৬
Share:

হাসপাতালে লক্ষ্মীকান্তবাবু।

দু’টি মিনিবাসের মধ্যে রেষারেষি চলছিল অনেকক্ষণ ধরেই। আচমকাই পিছনের বাসটি ডান দিকে দাঁড়ানো একটি লরির পাশ দিয়ে তীব্র গতিতে সামনের বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে লরির কেবিনের খোলা দরজায়। এর পরেই বিকট আওয়াজ, সঙ্গে তীব্র আতর্নাদ। সামনের মিনিবাসের যাত্রীরা দেখেন, চালকের সিটের পিছনে জানলার পাশে বসা এক বৃদ্ধের ডান হাতের কনুইয়ের চামড়া-মাংস কেটে ঝুলছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে জামা। ওই বৃদ্ধ-সহ অন্য যাত্রীরা চালককে বলেন, দ্রুত কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে। অভিযোগ, চালক তাদের কথায় কর্ণপাত না করে উল্টে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে এমন এক জায়গায় ওই জখম বৃদ্ধকে নামিয়ে দেন যেখানে কোনও হাসপাতালই নেই।

Advertisement

দু’টি বাসের রেষারেষির খেসারত এবং তাকে কেন্দ্র করে এ ভাবেই বাসের চালকের অমানবিক মুখের সাক্ষী রইল শহর।

সোমবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার চ্যাটার্জিপাড়ায়। পুলিশ জানায়, গুরুতর আহত ওই বৃদ্ধের নাম লক্ষ্মীকান্ত পালোধি (৬৫)। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায়। পরে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাঁকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে পাঠান। সেখানেও অবশ্য শয্যা জোটেনি তাঁর কপালে। এ দিন মেল সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের মেঝেয় বসে লক্ষ্মীকান্তবাবু জানান, তিনি চন্দ্রকোণা পুরসভার প্রাক্তন কর্মী। সোমবার তিনি বন্ধু তথা সহকর্মী জীবনকৃষ্ণ করের সঙ্গে সল্টলেকের পূর্ত ভবনে গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত কাজে। দুপুরে পূর্ত দফতরে কাজ সেরে একটি দোকানে খাওয়া দাওয়ার পরে তাঁরা সল্টলেক-হাওড়া বেলগাছিয়া রুটের একটি মিনিবাসে ওঠেন।

Advertisement

জীবনকৃষ্ণবাবু জানান, বি কে পাল অ্যাভিনিউ দিয়ে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ বাসটি গতি বাড়িয়ে সামনের একটি হাওড়াগামী বাসের সঙ্গে রেষারেষি শুরু করে। লক্ষ্মীকান্তবাবু বলেন, ‘‘বাসটি আচমকা ডান দিক দিয়ে সামনের বাসকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে। ডান দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির চালকের কেবিনের খোলা দরজায় তীব্র ধাক্কা মারে বাসটি। দরজার লোহার হাতল আমার ডান হাতের কনুইয়ে গেঁথে গিয়ে চামড়া-মাংস খুবলে তুলে নেয়।’’

এর পরেই জীবনবাবু এ যাত্রীরা চালক ও কন্ডাক্টরকে অনুরোধ করেন দ্রুত লক্ষ্মীকান্তবাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অভিযোগ, চালক বা কন্ডাক্টর তাঁদের তোয়াক্কা না করে প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে হাওড়ার চ্যাটার্জিপাড়ায় ওই দু’জনকে বৃদ্ধকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। জীবনকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতাল তো দূর, আমাদের গন্তব্য হাওড়া স্টেশনেও নামতে দেওয়া হয়নি। চ্যাটার্জিপাড়ায় যখন নামানো হয় তখন রক্তক্ষরণ আর যন্ত্রণায় লক্ষ্মীকান্তবাবু প্রায় নেতিয়ে পড়েছেন। ওই দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার সে সময় সাহায্য না করলে এই অজানা অচেনা জায়গায় কী হত জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন