আমতার রথ টানেন সাকু কাজী

জমিদারি প্রথা কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরম্পরা বদলায়নি। পরে দুর্গাপুজো, রথযাত্রা, দোল পূর্ণিমা পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হয়। সেটির কাজকর্ম দেখতেন সাকুর দাদু আসু কাজি ও বাবা আব্দুল কাজি।

Advertisement

নুরুল আবসার

আমতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:৪৬
Share:

সম্প্রীতি: রথের সামনে দাঁড়িয়ে সাকু কাজি। নিজস্ব চিত্র

দামোদরের পশ্চিমের গ্রাম আমতার তাজপুর। সেখানে রথযাত্রা উৎসবে একসঙ্গে সামিল হন হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। বহু বছর ধরে ওই গ্রামে চলে আসছে সম্প্রীতির বাতাবরণ।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০০ বছর আগে বর্ধমানের মহারাজার কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে ওই এলাকায় জমিদারি শুরু করেছিলেন মুকুট রায়। তিনি সেখানে দুর্গাপুজো, দোলযাত্রা এবং রথ চালু করেন। তিনটি উৎসবই হতো জাঁকজমকের সঙ্গে। পরে জাঁক কমলেও উৎসবে ছেদ পড়েনি। সেই উৎসবেই বংশ পরম্পরায় থেকে গিয়েছেন সাকু কাজিরা। তাঁদের পূর্বপুরুষেরা রায় পরিবারের নায়েব ছিলেন। দুর্গাপুজো, দোল, রথ—যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেটি দেখার দায়িত্ব ছিল তাঁদের উপরে।

জমিদারি প্রথা কবেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরম্পরা বদলায়নি। পরে দুর্গাপুজো, রথযাত্রা, দোল পূর্ণিমা পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হয়। সেটির কাজকর্ম দেখতেন সাকুর দাদু আসু কাজি ও বাবা আব্দুল কাজি। এখন সেই ভূমিকাই পালন করছেন সাকু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা সংসার চালানোর জন্য জমিদারির বেতনের উপরেই নির্ভর করতেন। পরে কাজ ও বেতন কমে যায়। কিন্তু তার পরেও ভালবাসার টানে পুজো ও রথে যোগ দিতেন আমার দাদু ও বাবা। আমিও সেই কাজ করি।’’

Advertisement

সাকু ওই গ্রামেই নিজের চেষ্টায় একটি মসজিদ তৈরি করেছেন। এককথায় তিনি নিষ্ঠাবান মুসলমান। তিনি জানান, পুজো, দোল পূর্ণিমা এবং রথের দিনে যত কাজই থাকুক, ঘরে বসে থাকা যায় না। চলে আসেন তাঁদের পুরনো ‘মনিব’দের কাছে। রায় পরিবারের বর্তমান সদস্য মানস রায় বলেন, ‘‘সাকুরা না এলে উৎসব ম্লান হয়ে যায় আমাদের কাছে।’’

হাওড়া জেলা যুব তৃণমূলের (গ্রামীণ) সভাপতি সুকান্ত পাল তাজপুর গ্রামেরই বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকে দেখেছি রায় পরিবারের প্রতিটি ধর্মীয় উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন কাজি পরিবার। এই সহজাত সম্পর্ক আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’’

আজ উল্টোরথ। হাতে হাত ধরে সেই রথের সামনে দাঁড়াবেন সাকু গাজি এবং মানস রায়। সামলাবেন মানুষের ভিড়। বার্তা দেবেন সম্প্রীতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন