মায়ের কোলেই স্বপ্ন দেখে শুভ

লড়াই এই প্রথম নয়। এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিয়েছে শুভজিৎ, মায়ের কোলে চড়েই।

Advertisement

সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৩:৪৯
Share:

ভরসা: কণিকাদেবীর কোলে শুভজিৎ। —নিজস্ব চিত্র

তিনি হাঁটেন। ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটেন। কাঁধে তাপ্পি দেওয়া ব্যাগ একখানা। সকালবেলা আট কিলোমিটার, ফিরতি পথও একই। বাড়ি থেকে ঠিক ওই দূরত্বটা পার করলে ছেলে গিয়ে বসতে পারে পরীক্ষার হলে। এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে উলুবেড়িয়ার রাজাপুর কাঁটাবেড়িয়া গ্রামের শুভজিৎ মালিক। ছোট থেকে ঠিক মতো বেড়ে ওঠেনি তার শরীর। পঙ্গু ছেলের ভরসা তাই মা— কণিকা মালিক। উপেক্ষা, ব্যাঙ্গের হাসি উড়িয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মা, ভরসা যোগাচ্ছে ছেলে।

Advertisement

লড়াই এই প্রথম নয়। এর আগে মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিয়েছে শুভজিৎ, মায়ের কোলে চড়েই। ২৬৬ নম্বর পেয়ে পাশ করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল কলা বিভাগে। শুভজিতের ইচ্ছে লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হবে সে। ছেলের সে টুকু ইচ্ছে পূরণ করতে প্রাণপণ লড়ছেন কণিকাও। পরীক্ষার হলে ছেলেকে বসিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করেন তিনি। কয়েক ঢোঁক জল খেয়ে বলেন, ‘‘ছেলেটা আমার প্রতিবন্ধী, দশ বছর বয়স হওয়ার আগেই ওর বাবা চলে গেল। তা বলে ওর স্বপ্ন পূরণ হবে না! না, তা আমি হতে দেব না। যত কষ্টই হোক, ওর লেখাপড়া চলবে।’’

শুভজিৎ যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখনই এক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার বাবার। সেই থেকে লড়াই শুরু কণিকার। ছেলের প্রতিবন্ধকতা, তার সঙ্গে আর্থিক অনটন। সব কিছু নিয়েই এগিয়ে যেতে চান তিনি। ভরসা বলতে বিধবা ভাতার কয়েকটা টাকা আর কিছু নারকেল, সুপারির গাছ। তা থেকে যা রোজগার— তা দিয়েই কোনও মতে চলে যায় মা, ছেলের সংসার। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহটা শুভজিতের সেই ছোটবেলা থেকে।

Advertisement

কণিকা বলেন, ‘‘ওর বাবা যখন চলে গেলেন, ভেবেছিলাম আর কিছু হবে না। কিন্তু ছেলে নাছোড়। স্কুলে ও যাবেই।’’ তারপর মায়ের লড়াই। শুধু পরীক্ষার হল নয়। শুভজিতের বাড়ি থেকে তাঁর স্কুলের দূরত্বও ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। নিয়মিত ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসতেন কণিকা। স্কুল শেষ হলে আবার কোলে চড়িয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।

মায়ের কষ্ট চোখ এড়ায় না ছেলের। কিছু জিগেস করার আগেই সে বলে ফেলে, ‘‘লেখাপড়া শিখতে হবে। নইলে মায়ের কষ্ট দূর হবে কী করে?’’ কিন্তু কলেজ তো হবে আরও দূরে— তখন? ‘‘ঠিক কিছু একটা হয়ে যাবে’’, বিশ্বাস করেন মা। ভরসা রাখে বাণীবন কল্যাণব্রত সঙ্ঘ হাইস্কুলের ছাত্র শুভজিৎও।

মায়ের পাশাপাশি শুভজিৎকে সাহায্য করে তার শিক্ষক, সহপাঠীরাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপনকুমার রায় বলেন, ‘‘ওর ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা। আর মনের জোর ১০০ শতাংশ। আমরা আছি ওর পাশে। ওর সহপাঠীরাও ওকে কোলে নিয়ে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে বসিয়ে দেয়। কিন্তু আর একটু সাহায্য দরকার। ছেলেটা আরও অনেকখানি এগিয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন