এত অস্ত্র এল কোথা থেকে, ধন্দ কাটছে না পুলিশেরও

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা দুষ্কৃতীদের ভাড়া করেছিল বিলুরা। ধৃতদের মধ্যে চারজন বিহারের দুষ্কৃতীও আছে। তারাই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং কার্তুজ এনেছিল বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জয়পুর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০১:৩৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দিন তিনেক আগে জোড়া খুনের সাক্ষী থেকেছে হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়া। পুলিশ অন্যতম অভিযুক্ত বিলু মল্লিককে গ্রেফতারও করেছে। তাকে জেরা করে খোঁজ চলছে অন্য আর এক অভিযুক্ত ইমতিয়াজ মল্লিকের। তবে এই খুনের পর পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে দুষ্কৃতীদের অস্ত্র সম্ভার।

Advertisement

পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা দুষ্কৃতীদের ভাড়া করেছিল বিলুরা। ধৃতদের মধ্যে চারজন বিহারের দুষ্কৃতীও আছে। তারাই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং কার্তুজ এনেছিল বলে পুলিশের দাবি। এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৩টি বন্দুক, পাঁচটি ৯ এমএম পিস্তল, ৫টি বড় চপার এবং ৪৭৪ রাউন্ড কার্তুজ। এ পর্যন্ত ১৯ জন ধরা পড়েছে। তবে ঘটনায় এখনও অনেক অভিযুক্ত অধরা। তাদের কাছ থেকে আরও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হতে পারে বলে পুলিশের অনুমান।

গত শুক্রবার সাতসকালে জয়পুরের ঘোড়াবেড়িয়ায় খুন হন তৃণমূল কর্মী নেতা শেখ শাজাহান এবং তাঁর ভাই শেখ লালচাঁদ। এক মহিলা-সহ দু’জনকে গুলিও করে দুষ্কৃতীরা। অস্ত্র উঁচিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা ধরে এলাকা চষে বেড়ায়। মণি মল্লিক নামে এক নাবালককেও অপহরণ করে তারা। ওইদিন তার দাদার কাছ থেকে এক কোটি টাকা মুক্তিপণও চাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

পুলিশের দাবি, এই পুরো ঘটনার পরিকল্পনার নায়ক তৃণমূল কর্মী ইমতিয়াজ মল্লিক। আর সেই পরিকল্পনা কার্যকর করার দায়িত্ব ছিল বিলু মল্লিকের উপর। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর বালা মল্লিক এবং তার ভাই বিলু তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কর্মী হিসাবে উঠে আসে। তাদের সঙ্গে ছিলেন শাজাহান এবং লালচাঁদ। শাজাহানদের সঙ্গে বিলুদের গোলমাল শুরু ২০১০ সালে। তোলাবাজির অভিযোগে বালা-বিলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে ধরা হয় তোলাবাজিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা ইমতিয়াজ মল্লিককেও। তদন্তকেন্দ্র তৈরি করে পুলিশ।

বালা, বিলু, ইমতিয়াজ ধরা পড়ার পরে গ্রামে ফেরেন শাজাহান এবং লালচাঁদ। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, এই দুই ভাই বালা-বিলুর স্থানটি নেন। লালচাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে কুলিয়াঘাট জমা নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগারের অভিযোগ ওঠে। শাজাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারির নামে পঞ্চায়েতের টাকা নয়ছয় করার।

বালা, বিলু এবং ইমতিয়াজরা জামিন পেলেও অন্য মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় গ্রামে ফিরতে পারছিল না। ওই তিন জন যাতে গ্রামে ফিরতে না পারে সে জন্য বেনামে মামলাগুলি শাজাহান এবং লালচাঁদই করাচ্ছিলেন। গ্রামবাসীদের অনুমান, সেই রাগেই তারা শাজাহান এবং লালচাঁদকে খুনের পরিকল্পনা করে।

পুলিশের দাবি, ইমতিয়াজের পরিকল্পনা ছিল দিবালোকে শাজাহান এবং লালচাঁদকে খুন করা হবে। তারপরে অস্ত্র নিয়ে পুরো গ্রামকে চমকাবে। এলাকাটি নদীপথে ঘেরা। তাদের ধারণা ছিল সময়মতো পুলিশ আসতে পারবে না। সেই ফাঁকে চম্পট দেবে তারা। কিন্তু কাল করল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস।

খবর পেয়ে পুলিশ ধীরে ধীরে দ্বীপ এলাকা ঘিরে ফেলে। জেলা পুলিশ সুপার সুমিতকুমার এবং হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ডিপি সিংহ আসেন অভিযানে। খানাকুল সীমান্তে মাড়োখানার কাছ থেকে নৌকায় চেপে দুষ্কৃতীরা যখন পালাচ্ছিল তখন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতীদের ধরে। উদ্ধার করা হয় অপহৃত নাবালককেও। জেলা পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সুমিতকুমার বলেন, ‘‘বিলু ধরা পড়েছে। আ ইমতিয়াজকে ধরতে পারলে বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন