সন্ধান: উদ্ধার হওয়া মোটরবাইক। নিজস্ব চিত্র
বাজারে যে বাইকের দাম কয়েক লক্ষ টাকা, কয়েকজন যুবকের কাছে মাত্র ২০ হাজার দিলেই মিলছিল সেই বাইক। তবে গাড়ির কাগজ সঙ্গে সঙ্গে মিলবে না। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মাসখানেক—কথাটা কানে যেতেই খটকা লেগেছিল দুঁদে পুলিশ অফিসারদের। ওই যুবককে সঙ্গে যোগাযোগ করে বাইক চুরি চক্রের সন্ধান পেল পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বাইক চুরি চক্রে জড়িত অভিযোগে ঋজু, টোকন এবং গজা নামে তিন যুবককে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। তাদের জিম্মা থেকে উদ্ধার হয় ২৩টি মোটরবাইক ও স্কুটি। পুলিশের অনুমান, জেরা করলে আরও গাড়ির সন্ধান মিলবে।
সোমবার ধৃতদের চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তিনদিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা জানান, হুগলি লাগোয়া বর্ধমান, কল্যাণী, দুই ২৪ পরগনা-সহ নানা জেলায় এই মোটরবাইক চক্রের জাল বিছানো। চক্রের অন্যদের ধরতেও তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’
কেমন করে চলত অপারেশন?
তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ধৃতরা মূলত বাইক চোরদের কাছ থেকে কম দামে বাইক কিনে নিজেদের হেফাজতে রাখত। সুযোগ বুঝে বেশি দামে তা বেচত। এই চক্রের মূল পাণ্ডা তাতা এখন জেলে। সে ইদানিং বাঁশবেড়িয়া থেকে ভদ্রেশ্বরে ডেরা বদলে থাকছিল। তবে তাতার দলবলের চুরি করা অনেক বাইক গজাদের ডেরা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখান থেকেই পুলিশ নিশ্চিত, তাতা এখন হুগলি জেলে থাকলেও তার বাইক চুরিরচক্রকে কাজে লাগাত গজারা। বাইক চুরি ও বিক্রির পাশাপাশি তারা গাড়ির কাগজও ঘুর পথে করিয়ে দিত। দিন কয়েক আগে মগরা থানার পুলিশ ওই চক্রের হদিশ পায়। তারপরই জাল বিছিয়ে ধরা হয় তিন পাণ্ডাকে।
কিন্তু কী ভাবে চুরি হওয়া বাইকের কাগজ তৈরি করত রিজু ও টোকনরা। তাহলে কি জেলা আরটিও(পরিবহণ) দফতরের কেউ কেউ এই চক্রের সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত?
তদন্তে জানা গিয়েছে, নিয়ম অনুয়ায়ী গাড়ির সঙ্গে মূল কাগজপত্র রাখার কথা। কারণ, পথে যখন পুলিশ তল্লাশি চালায় তখন জেরক্স নয়, গাড়ির আসল কাগজপত্র পুলিশকে দেখাতে হয়। সেই কারণে অনেকেই গাড়িতে আসল কাগজ রাখেন। চোরাই অনেক বাইক থেকেই তাই সেই কাগজ হাতিয়ে নেওয়া হয়। তাই মোটর বাইক বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাকে সেই গাড়ির মূল কাগজ দিতে অসুবিধা হয় না। সেই ক্ষেত্রে দাম কিছুটা চড়া। আবার অনেককেই ঘুরপথে গাড়ির নকল কাগজ তৈরি করে দিত। এখন সেই ঘুরপথেরই সন্ধান করছে পুলিশ।
আবার, মঙ্গলবার দুপুরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে চুঁচুড়ার নারকেল বাগান এলাকা থেকে সাহাজাদ মল্লিক নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে বলাগড়ের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা। আটক করা হয়েছে তার মোটরবাইকও। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতীর সাহায্য নিয়ে সে প্রতিদিন চুঁচুড়া চন্দননগরে চুরি করত। আজ, বুধবার তাকে আদালতে তোলা হবে। ধৃত ব্যক্তিকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে চুরি যাওয়া জিনিস উদ্ধারের চেষ্টা চালাবে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ।