ফাঁদে: চালক মদ্যপ কি না চলছে তার পরীক্ষা। নিজস্ব চিত্র।
রামসিং পাসোয়ান। দশ চাকার ট্রাক নিয়ে এই রাজ্যে নিয়মিত আসেন বিহারের মধুবনি থেকে। দিন কয়েক আগে পুলিশের বড় লাঠি গাড়ির হেড লাইটে নজরে আসতেই সটান ব্রেকে পা। গাড়ির সামনের কাচটা কোনওক্রমে বেঁচে গিয়েছিল সে যাত্রায়। গাড়ি থেকে ধড়ফড়িয়ে নামতেই পুলিশের ফাঁদে। চলল জেরা। দুই ট্রাফিক কনস্টেবল আবার সরাসরি তাঁর মুখের গন্ধ শুঁকতে শুরু করলেন। তাতেও সন্দেহ গেল না। শেষে একটা যন্ত্রে লাগানো বড় পাইপ সরাসরি তাঁর মুখের ভিতরে চালান করে দেওয়া হল। একজনের টর্চের আলো আবার মিটারের উপর। যিনি মাপছিলেন, তিনি এ বার উত্তর দিলেন, ‘‘না স্যর! মিটার ৩০ এর উপরে উঠে গেছে।’’ উত্তর এল, ‘‘দে চালান করে।’’
গাড়ি চালানো আর মদ্যপান এক সঙ্গে নয়। দুর্গাপুর এক্সওয়েতে মদ পেটে নিয়ে গাড়ি চালালে যে কারও অবস্থা হতে পারে রামসিংয়ের মতো। পুলিশের মামলা, হয়রানি, জরিমানা, আবার জেল ও জরিমানা দুটোই জুটতে পারে ভাগ্যে। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে পর পর দুর্ঘটনার জেরে এ বার কোমর বেঁধে নেমেছে হুগলি জেলা পুলিশ। চলছে বিশেষ ‘চেকিং’।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত কয়েক মাসে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। যার শিকার হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে লোকশিল্পী কালিকাপ্রসাদ। দুর্ঘটনায় চোখে গুরুতর আঘাত পান অভিষেক। মৃত্যু হয় কালিকাপ্রসাদের। পুলিশের মতে, দ্রুতগতির ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেইসঙ্গে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ তো রয়েইছে। তা ছাড়া গাড়ি চালানোর সময় ক্লান্তিতে চালকের ঘুমিয়ে পড়াও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বোর্ডে এক্সপ্রেসওয়ে ছেয়ে ফেলা হলেও তার সুফল তেমন মিলছে না।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে এ বার সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘কড়া দাওয়াই’য়ের। বিশেষ চেকিং ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেছে নেওয়া হচ্ছে কিছু দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা। দাদপুর, মহেশ্বরপুর, ডানকুনি-সহ বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিশেষ চেকিং। হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ঈশানী পালের নেতৃত্বে সম্প্রতি বিশেষ চেকিং এর ব্যবস্থা করা হয় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। ঈশানী দেবী বলেন, ‘‘বাড়তি গতি বিপদ ডেকে আনছে। মানুষকে সচেতন করতেই আমরা চেকিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। গতির প্রশ্নে সবাই সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। গাড়ি চালনোর ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙলে পুলিশ এ বার কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’