আমতার গ্রামে গিয়ে নালিশ শুনল পুলিশ

কেউ বললেন, ‘‘ভোটার কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। একটু দেখুন।’’ কেউ বললেন, ‘‘বাঁধের রাস্তা বড় নির্জন। রাতে পুলিশ টহল দিলে ভাল হয়।’’ কেউ আবার ইঁদুরের উৎপাতের জন্য পড়শিকেই দুষে অভিযোগ জানালেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০১:০৮
Share:

গ্রামবাসীর অভিযোগ শুনছেন পুলিশ কর্তা। —নিজস্ব চিত্র।

কেউ বললেন, ‘‘ভোটার কার্ড হারিয়ে গিয়েছে। একটু দেখুন।’’

Advertisement

কেউ বললেন, ‘‘বাঁধের রাস্তা বড় নির্জন। রাতে পুলিশ টহল দিলে ভাল হয়।’’

কেউ আবার ইঁদুরের উৎপাতের জন্য পড়শিকেই দুষে অভিযোগ জানালেন।

Advertisement

আমতার কুমারিয়া গ্রামে রবিবার শিবির করে সে সব শুনল পুলিশ। যে ব্যবস্থার পোশাকি নাম— ‘পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র’। সপ্তাহখানেক আগে ওই শিবির খোলা হয়েছিল রসপুর গ্রামেও। রসপুরের শিবিরে অভিযোগ জমা পড়েছিল ৫৮টি। এ দিন কুমারিয়ায় জমা পড়ল ৪৩টি।

রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ যে হেতু অনেক সময় থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন না, তাই তাঁদের জন্য গ্রামেই করা হবে ‘পুলিশি সহায়তা কেন্দ্র’। মাসে এক বা একাধিকবার। সেখানে প্রয়োজন হলে ডায়েরি বা এফআইআর নেওয়া হবে। এ ছাড়াও রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য বা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অভিযোগের কথাও শুনে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হবে।

সেই নির্দেশ মতোই আমতায় শিবিরের আয়োজন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এর আগে ফুটবল খেলার মাধ্যমে জনসংযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তার থেকে এটা ভাল উদ্যোগ। দু’টি শিবিরেই দেখা গিয়েছে, মানুষের সাহস বেড়েছে। অনেকে শিবিরে যোগ দিয়েছেন। পুলিশের সঙ্গে সহজ ভাবে কথা বলছেন। জনসংযোগের এটা একটা শক্তিশালী মাধ্যম।

কুমারিয়া গ্রামে এ দিন শিবির বসে স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। তিন জন অফিসারের নেতৃত্বে ছিলেন ওসি পার্থ হালদার। দু’দিন আগে থেকে গ্রামীণ পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে এ নিয়ে প্রচার চালানো হয়। অভিযোগ নেওয়া শুরু হয় বেলা ১২টা থেকে। শুরুতেই মহিলা-পুরুষ মিলিয়ে অন্তত ৫০ জন গ্রামবাসী হাজির হয়ে যান।

সামনের সারিতে বসেছিলেন মীনা পাল। তাঁর ভোটের পরিচয়পত্র হারিয়েছে দিন পনেরো আগে। কিন্তু থানায় গিয়ে ডায়েরি করে উঠতে পারেননি। এ দিন করলেন। মীনাদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ আসবে শুনে এলাম।’’

বিশ্বজিৎ মণ্ডল নামে এক যুবকের পুলিশের কাছে অভিযোগ, ‘‘মান্দারিয়া খালের বাঁধের উপরের রাস্তা অনেকটা নির্জন। সন্ধ্যাবেলা মহিলাদের তো বটেই, আমাদেরও ওখান দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।’’ তাঁকে আস্বস্ত করলেন ওসি।

স্বপন মাখাল নামে এক যুবকের অভিযোগ, চার বছরে দ্বিগুণ হওয়ার আশায় একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় ১২ হাজার টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু সংস্থা উঠে গিয়েছে। এজেন্টকে বার বার বলা সত্ত্বেও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। আরও কয়েক জন গ্রামবাসীও একই অভিযোগ। আজ, সোমবার বেলা ১১টার সময়ে সকলকে থানায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে দেখা করতে বললেন ওসি। রাস্তা তৈরি হচ্ছে না কেন, সে কথাও শুনতে হল পুলিশকে।

রীতা দে নামে এক গৃহবধূর সমস্যা আবার অন্য। তিনি বললেন, ‘‘স্যার, আমার প্রতিবেশী হিংসা করে আমাদের বাড়ির মাটির দেওয়ালের গা ঘেঁষে ধান রেখেছে। ইঁদুর ধান খেতে এসে দেওয়ালের মাটি কুরে কুরে গর্ত করছে। ফলে, বাড়ি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’’ সেই অভিযোগও নেওয়া হল।

পুলিশের এই নতুন ভূমিকায় গ্রামবাসীরা খুশি। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে অভিযোগ জানানো অনেক সহজ হল। অভিযোগ গ্রহণ পর্ব চলে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে। প্রতিটি অভিযোগ খতিয়ে দেখা বলে আমতা থানার এক কর্তা জানান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement