রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। গেরস্থ বাড়িতে চলছে তারই আয়োজন। কারও ঘরে মাটির প্রতিমা, তো কেউ পুজো করবেন মাটির সরা। বাজার ঘুরে সেরা প্রতিমার খোঁজে যেমন ব্যস্ততা, তেমনই আয়োজনে যাতে ত্রুটি না থাকে তা নিয়েও সজাগ গৃহলক্ষ্মীরা। ফুল-ফল থেকে তিল, খই, চিঁড়ে, নারকেলের নাড়ু দিয়ে লক্ষ্মীর আবাহনে দম ফেলার ফুরসত নেই এখন। কিন্তু সেই আয়োজনে গৃহস্থের কপালে ভাঁজ ফেলেছে জিনিসপত্রের দাম।
আপেল, আঙুর, ন্যাসপাতি, কলা, খেজুরের পাশাপাশি কদমা, নারকেলের দাম পকেটে ছ্যাঁকা দেওয়ার মতো। গৃহিণীদের দাবি, অন্য সময়ের থেকে পুজোর সময় বেশি দাম চাইছেন দোকানিরা। হুগলির চুঁচুড়া, পান্ডুয়া, চণ্ডীতলা, শ্রীরামপুর-সহ হাওড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে চড়া দামের ছবি। আপেলের দর ঘোরাফেরা করছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। শশা বিকোচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। নারকেল নাড়ু ছাড়া ধনলক্ষ্মীর আরাধনা নৈব নৈব চ! নারকেল নাড়ুর মহিমা সেই আদ্যিকাল থেকেই মানুষের মুখে মুখে। সেই নারকেলই এখন ‘মহার্ঘ্য’। এক-একটি বিকোচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকায়। ‘সর্বঘটে’র কাঁঠালি কলা ৪৫ টাকা থেকে ৫৫ টাকা ডজন। ন্যাসপাতি ১২০ টাকা কেজি। পেয়ারা ৬০-৮০ টাকা। বেদানার কিলো ১৮০ টাকা। তরমুজ ৫০ টাকা কেজি। আঙুর বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকায়। এক একটি আখের দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
তবে বিক্রেতাদের অনেকেই মনে করছেন, লক্ষ্মীপুজোর আগে দাম আরও বাড়বে। চণ্ডীতলার মশাট বাজারের এক ফল বিক্রেতার কথায়, ‘‘কলকাতা থেকে ফল কিনে আনি। এমনিতেই ফলের দাম ওঠানামা করে। লক্ষ্মীপুজোর সময় দাম কিছুটা বেড়ে যায়। ফলে শুক্র, শনিবার দাম আরও বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে।’’ পান্ডুয়া স্টেশন বাজারের ফল বিক্রেতা অসিত ঘোষ বলেন, ‘‘আনারস-নারকেলের মতো ফলের জোগান এ বার কিছুটা কম। তাই দামটাও বেশি।’’ চড়া ফুলের দামও। ফুল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, দুর্গাপুজোয় এমনিতেই ফুলের দাম বাড়ে। লক্ষ্মীপুজোয় প্রচুর চাহিদা থাকায় তা আরও বাড়ে। তা ছাড়া, এ বার পুজোর মাসখানেক আগে থেকে বৃষ্টিতে ফুলচাষ কিছুটা মার খেয়েছে। বাজারে টান রয়েছে। দাম বাড়ার সেটাও কারণ।
ফলের মতোই প্রতিমার দরও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকায় বিভিন্ন আকারের প্রতিমা বিক্রি হচ্ছে। সরার দাম ঘোরাফেরা করছে ৩০ থেকে ৮০ টাকায়। বাঁশবেড়িয়ার গৃহবধূ রাধিকা মল্লিক জানালেন, ‘‘গত বছর ১২০ টাকা দিয়ে পছন্দসই লক্ষ্মীপ্রতিমা কিনেছি। এবারও একই দামে কিনলেও ঠাকুরের সাইজ বেশ কিছুটা ছোট।’’ পাণ্ডুয়ার রেবা দাস জানান, গত বছর ফলের বাজার যেখানে ছ’শো-সাতশো টাকায় ম্যানেজ হয়ে গিয়েছিল, এ বার সেখানে প্রায় হাজার টাকা গলে গিয়েছে তাঁর।
সব মিলিয়ে লক্ষ্মীপুজোর আগে বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে আম-বাঙালির। খরচে ভারসাম্য বজায় রেখে ধনলক্ষীর আরাধনার আয়োজন এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছাপোষা গেরস্থের কাছে।