জলবন্দি বরাহনগরও

বৃষ্টি থামার পরেও বানভাসি হাওড়া

যে দূরত্বের ভাড়া ১০ টাকা, মঙ্গলবার সকালে তা-ই বেড়ে দাঁড়ালো ১০০ টাকায়!অসুস্থ দিদিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এ দিন সকালে যানজটে ফেঁসে গিয়েছিলেন অর্ণব বাঙাল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে বাধ্য হয়ে দিদিকে নিয়ে হাঁটুজলে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু এগোবেন কী করে?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:১৭
Share:

ডুবেছে ওয়ার্ড। হাওড়ার সত্যবালা আইডি হাসপাতালে।

যে দূরত্বের ভাড়া ১০ টাকা, মঙ্গলবার সকালে তা-ই বেড়ে দাঁড়ালো ১০০ টাকায়!

Advertisement

অসুস্থ দিদিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এ দিন সকালে যানজটে ফেঁসে গিয়েছিলেন অর্ণব বাঙাল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে বাধ্য হয়ে দিদিকে নিয়ে হাঁটুজলে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু এগোবেন কী করে? বেলিলিয়াস রোডে যতদূর চোখ গিয়েছে, শুধুই জল। শেষে ১০০ টাকা ভাড়াতেই ভ্যান রিকশায় দিদিকে নিয়ে রওনা দিলেন।

সোমবার সারা দিনের বৃষ্টিতে কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েছে গোটা হাওড়া শহর। প্রায় একই ছবি গঙ্গার অপর পাড়ে বরাহনগরেও। এ দিন সকালেও যার জেরে ভুগতে হয়েছে মানুষকে। বিভিন্ন রাস্তায় জমা জলের কারণে দশ মিনিটের পথ যেতে সময় লেগেছে আধ ঘণ্টা। কোথাও আবার ঘরের ভিতরে জল ঢুকে যাওয়ায় খাটের উপরেই পাততে হয়েছে সংসার। হাওড়ার জায়সবাল, সত্যবালা হাসপাতাল, লিলুয়া থানার ভিতরেও ঢুকে গিয়েছে জল। তবে এ দিন বিকেল থেকে দুই পুরসভারই কয়েকটি এলাকায় দ্রুত জল নামতে শুরু করেছে বলেই দাবি হাওড়া ও বরাহনগরের পুর-কর্তাদের।

Advertisement

এক দিকে হাওড়ার নিকাশি ব্যবস্থা খুব বেশি উন্নত নয়, তার উপর ভরা জোয়ার থাকায় টানা বৃষ্টিতে সমস্যা আরও বেড়েছে বলেই মনে করছেন পুর কর্তারা। সোমবার সকাল থেকেই বেগতিক বুঝে বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও ত্রাণ কর্মীদের পাঠাতে শুরু করেছিল পুরসভা। বিকেলের পরে পরিস্থিতি প্রায় হাতের বাইরে চলে যেতে দেখে সমস্ত কাউন্সিলরদের রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি দেখে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী। সেই মতো পুরসভার কন্ট্রোল রুমে বালি থেকে শিবপুর সমস্ত এলাকা থেকে ‘বানভাসি’ হওয়ার খবর এসে পৌঁছতে থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে পুর কর্মীদের কাজ ও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মেয়র পারিষদ (নিকাশি ও বিপর্যয় মোকাবিলা) শ্যামল মিত্র। তবে তিনি জল জমার সব দায় পুরসভার উপর দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ভরা কোটালের কারণে পুরসভার নিকাশি নালা দিয়ে জল বেরোতে দেরি হচ্ছে ঠিকই। আবার রেলের অসহযোগিতার কারণে উত্তর হাওড়া, লিলুয়ার বড় অংশের এলাকা জলে ডুবে রয়েছে।’’

জলপথেই যাতায়াত। মঙ্গলবার। দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।

হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, সোমবারের বৃষ্টিতে ২, ৩, ৬, ৭, ৯, ১৫, ২০, ২২, ৪৯, ৫২, ৫৪, ৫৫, ৬১, ৬৪, ৬৫, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড কার্যত জলে ডুবে গিয়েছে। বামুনগাছির ছোটেলাল মিশ্র লেন, টিকিয়াপাড়া, নোনাপাড়া-সহ ঘুসুড়ি, সালকিয়ার বেশ কিছু এলাকার অবস্থা খুবই শোচনীয়। শ্যামলবাবুর দাবি, রেলের রানি ঝিল সাফাই না করার ফলে আবার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পিলখানা, ভৈরব দত্ত লেন, ১০ নম্বরের শশীভূষণ দে স্ট্রিট-সহ লিলুয়া ঘেঁষা বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রেল লাইনের জলও ঢুকে পড়ছে এলাকায়। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৪টি পাম্প চালানো হয়েছে। পাম্পিং স্টেশনগুলিও কাজ করছে। কিন্তু গঙ্গা ভরা থাকায় জল বেরোতে পারছে না। এ দিকে রেল লাইনে ঢুকে কাজ করতে গেলে পুর-কর্মীদের বাধা দিচ্ছে আরপিএফ।’’ জল জমে গৃহছাড়া কিংবা ঘরবন্দিদের জন্য এ দিন শুকনো খাবার, ওষুধ বিলি করেছে পুরসভা।

তবে বরাহনগরে জল জমলেও ত্রাণ বিলি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বাগজোলা খাল দিয়ে ঠিক মতো জল বেরোতে না পারায় বিটি রোডের পূর্ব দিকের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সতীন সেন নগর, নর্দান পার্ক, ১৭ নম্বরের শীতলামাতা লেন, ফরোয়ার্ড কলোনি, মৎসজীবী কলোনি, ১৮ নম্বরের নিউ ন’পাড়া কলোনি-সহ ১৯, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক জলে ডুবে রয়েছে। বরাহনগরের চেয়ারপার্সন অপর্না মৌলিক বলেন, ‘‘বিদ্যাধরী নদীর জলস্তর বেশি হওয়ায় বাগজোলা খালের জল নামতে পারছে না। তাই কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। পাম্পও চালানো হয়েছে।’’ তবে হাওড়া ও বরাহনগর কয়েকটি এলাকাতেও রাত পর্যন্ত জল জমেছিল বলে জানিয়েছে পুরসভা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন