পোলবায় দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাটেনি আতঙ্ক
pool car

পুলকার চালকের দায়িত্ববোধ নিয়েই প্রশ্ন

ওই পুলকারটির রক্ষণাবেক্ষণ যে আদৌ হত না, তা এ দিন পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিষ্কার।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৬
Share:

পরীক্ষা: ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল। ছবি: তাপস ঘোষ

দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

Advertisement

পোলবায় পুলকার দুর্ঘটনার রেশ কাটল না শনিবারেও। উঠেছে চাঞ্চল্যকর নানা অভিযোগ। হাজার হাজার টাকা খরচ করে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন অভিভাবকেরা। কিন্তু আদপে তা কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ওই দুর্ঘটনায় জখম অমরজিৎ সাহা এখনও চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের সুপার উজ্বলেন্দুবিকাশ মণ্ডল জানান, শিশুটির পেটে নয়ানজুলির নোংরা জল ঢুকে গিয়েছিল। ‘ওয়াশ’ করে তা বের করা হয়েছে। তার অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকেরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।

শুক্রবারের দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলকারটিতে থাকা কয়েক জন পড়ুয়ার অভিভাবকরা জানান, কেন অত্যধিক জোরে গাড়ি চালানো হচ্ছিল, প্রতিদিনই ওই ভাবে চালানো হত কিনা, তাঁরা তা বুঝে পাচ্ছেন না। এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ঋষভ সিংহের ঠাকুমা শান্তিদেবী বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই ঋষভ বলছিল, সে দু’বার গাড়িতে চেপে স্কুলে যায়। ছেলেকে বিষয়টা দেখতে বলেছিলাম। কাজে ব্যস্ত থাকায় ছেলে পারেনি।’’ ঋষভের বাবা, শ্রীরামপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

Advertisement

আগামী মঙ্গলবার সন্তোষের বোনের বিয়ে। গত বৃহস্পতি থেকেই আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করেন। শ্রীরামপুরের ধোবিঘাটের কাছে শনিবার সন্তোষদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, উৎসবের পরিবেশ উধাও। ঋষভের মা প্রমীলা কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। ঋষভের জ্যাঠামশাই রাজকিশোর সিংহ জানান, ঋষভ সুস্থ হলে কোনও মতে বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। ঋষভের মতোই সঙ্কটজনক অবস্থায় এসএসকেএম-এ ভর্তি দিব্যাংশু ভকত। বৈদ্যবাটীর বৈদ্যপাড়ায় বাড়িতে এ দিন দুপুরে তাঁর ঠাকুমা প্রতিমা ভকত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি রাস্তায় কী ভাবে চলছে, জানতাম না। সময়ে পৌঁছনোর জন্য হয়তো জোরে চালাত। চালকদের তো দায়িত্ববোধ থাকা উচিত।’’

দুর্ঘটনা ঠেকাতে

কাল, সোমবার থেকে পুলিশ জেলা সদর মহকুমায় পুলকার পরীক্ষার কাজে নামছে। সচেতনতা শিবিরে অভিভাবক, পুলকার সংগঠন এবং চালকদের ডাকা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার মহকুমায় ‘আদর্শ পুলকার বিধি’ তৈরি করা হবে। বিধিভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই পুলকারেই ছিল শ্রীরামপুরের রামসীতা লেনের বাসিন্দা, দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ঐশানী পাল। তাঁর মা ডলি জানান, আগে তিনিই মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শামিম আখতারের সঙ্গে চুক্তি করে পুলকারে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি জানতেন যে, শেওড়াফুলিতে অন্য গাড়িতে মেয়েকে তোলা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছনোর জন্য চালকের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল, কেন তিনি অত জোরে চালাচ্ছিলেন, সেটাই প্রশ্ন।’’

ডলি জানান, এক মাস আগে একটি মেয়েকে বাড়িতে নামানোর পরে গাড়ির দরজা বন্ধ করার সময় ঐশানীর হাত চেপে যায়। তাতে তার ডান হাতের বুড়ো আঙুলের হাড়ে চিড় ধরে। সেই কারণে তিন সপ্তাহ সে স্কুলে যেতে পারেনি। ওই মহিলার প্রশ্ন, ‘‘চালক এত দায়িত্বজ্ঞানহীন কী করে হন? শুক্রবার যা ঘটল, তাতে মেয়ে স্কুল থেকে যতক্ষণ বাড়িতে না ফিরবে চিন্তা থেকেই যাবে। স্কুলের তরফে বাসের ব্যবস্থা করলে খুবই ভাল হয়।’’

ওই পুলকারটির রক্ষণাবেক্ষণ যে আদৌ হত না, তা এ দিন পুলিশ এবং ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিষ্কার। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, ‘‘চাকা ক্ষয়ে এমন সমান হয়ে গিয়েছে যে এতে অনেক সময়েই ব্রেক ধরে না। সেই কারণেই সম্ভবত গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও চালক পারেননি।’’

বহু ক্ষেত্রে পুলকার-চালকদের বয়স রীতিমতো কম থাকে, এমন অভিযোগও সামনে আসছে। অভিভাবকদের একাংশের দাবি, ১৬-১৭ বছরের ছেলেদেরও পুলকার চালানোয় কাজে লাগানো হয়। কোন্নগরের নবগ্রামের একটি স্কুলের পুলকার চালায় এক তরুণ। বয়স মেরেকেটে ১৭। তার কথায়, ‘‘সংসারে অভাব আছে। বাবা আনাজ বেচেন। উত্তরপাড়ার মোটর ট্রেনিং স্কুলে গাড়ি চালানো শিখেছি। ওই স্কুলের কাকুই কথা দিয়েছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করিয়ে দেবে‌ন। ভালই গাড়ি চালাই।’’

জোরে গাড়ি চালানোর জন্য পুলকার-মালিকেরা পাল্টা অভিভাবকদের দুষছেন। শ্রীরামপুর এলাকার এক পুলকার-মালিক বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবক বাড়ি থেকে সময়ে বাচ্চাকে গাড়িতে তোলেন না। দেরি করেন। সব মিলিয়ে যখন অনেক দেরি হয়, তখন বাচ্চাদের স্কুলের গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চালকেরা জোরে গাড়ি চালাতে বাধ্য হন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন