মুম্বই রোডের উপরেই অটোর স্ট্যান্ড। উলুবেড়িয়ায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।
পিছনে তো বটেই, সামনেও ঠাঁই নেই। উঠতে গিয়েও থমকে গেলেন এক যাত্রী। যা অবস্থা তাতে চালক বসবেন কোথায়! নিমদিঘি থেকে রানিহাটি যাবেন। অটোর জন্য তাই অপেক্ষায়। প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাকের ফাঁকেই চালক অটোয় উঠে পড়লেন। ওই যাত্রী বিস্ময়ে দেখলেন কোনওমতে দুটো হাত অটোর হ্যান্ডেলে রেখে স্টার্ট দিলেন। এ ভাবে যাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে বাসেই উঠে পড়লেন তিনি।
এটা কোনও খণ্ডচিত্র নয়। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার রানিহাটি থেকে নিমদিঘি অটো রুটের রোজকার ছবি। ওই যাত্রী ঝুঁকি না নিতে চাইলেও প্রতিদিন এভাবেই যাতায়াত করতে বাধ্য হন কয়েক হাজার যাত্রী। শুধু এই রুটেই নয়, নিমদিঘি থেকে বাগনান, বাগনান থেকে কোলাঘাট, বাগনান-বাকসি, রানিহাটি থেকে উলুবেড়িয়া মহকুমা আদালত প্রায় সব রুটেই এক ছবি। যাত্রীর জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি রয়েছে বেআইনি অটোর রমরমাও। যা নিয়ে ঝামেলাও পরিচিত ছবি।
যাত্রীদের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় যে ভাবে অটোর দৌরাত্ম্য চলে তাতে বোঝাই যায় ওদের দাপটে কতটা অসহায় প্রশাসন। ট্রাফিক আইন ভাঙা থেকে, বেআইনি অটো এর কোনওটার বিরুদ্ধেই পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। ফলে যেমন দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনই তা নিয়ে ক্ষোভও বাড়ছে। অভিযোগ যে কতটা সত্যি তা বুধবার রাতেই টের পাওয়া গিয়েছে। যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি করছিল নিমদিঘি-রানিহাটি রুটের দু’টি অটো। সেই সময়েই একটি অটোকে ধাক্কা মারে একটি ট্যাঙ্কার। ধাক্কার চোটে অটোটি নয়ানজুলিতে উল্টে যায়। দুই শিশুসহ জখম হন ১২ জন। ঘটনার পর অটো-শাসন নিয়ে পুলিশ নড়ে চড়ে বসলেও তাতে কতটা কাজ হবে তা নিয়ে সংশয়ে প্রশাসনেরই একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্তা জানান, রাজনীতির ছাতা যতদিন অটোচালকদের উপরে থাকবে, ততদিন কড়া হাতে অটোর দৌরাত্ম্য মোকাবিলা সম্ভব নয়।
জাতীয় সড়কে এমনিতেই অটো চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু তার তোয়াক্কা না করেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক তথা মুম্বই রোডে অবাধে চলাচল করে অটো। যার অনেকই বেআইনি। জাতীয় সড়কে শুধু অটো চালানোই নয়, মুম্বই রোডে অটোস্ট্যান্ডও বানিয়ে ফেলেছেন চালকেরা। ফলে পথচারীরা সমস্যায় পড়ছেন। দুর্ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই এ সব চললেও তারা না দেখার ভান করে। আসলে রাজনীতির ছাতাই ওদের রক্ষাকবচ।
হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, বেআইনি অটো ধরতে নিয়মিত অভিযান চলে। অটো বাজেয়াপ্তও করা হয়। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত বাগনান বাসস্ট্যান্ড অটো চালকদের সংগঠনের সম্পাদক বাপন কাজীও মুম্বই রোডে অটো চলাচলের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘পুজোর পরে এ বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ হাওড়া জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা পার্থপ্রতীম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুম্বই রোডে যে ভাবে বেআইনি অটো চলে তা উদ্বেগজনক। পুরো বিষয়টি পরিবহণ মন্ত্রীকে জানিয়েছি। মন্ত্রী বলেছেন শীঘ্রই পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।’’
বিভিন্ন রুটে চলা বেআইনি অটোর জন্য সরকারের রাজস্বেরও ক্ষতি হয়। পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলে আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বেরিয়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকা। অথচ সব জেনেও প্রশাসন নির্বিকার। তা ছাড়া, ছয় লেন হওয়ার পরে মুম্বই রোডে গাড়ির গতি বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে রাস্তা জুড়ে শ্লথগতির অটোর দাপাদাপিতে গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছে বড় বড় গাড়ি। কখনও কখনও সেই কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
বেআইনি অটোচালকদের একাংশের দাবি, সরকারকে কর না দিলেও পুলিশকে তাঁরা নিয়মিত টাকা দেন। যদিও টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। (চলবে)