ইঞ্জিন ভ্যানেই স্কুলে যাতায়াত পড়ুয়াদের। পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার
নিয়ম বন্দি কাগজেই!
শনিবার হুগলি এবং হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেল, পুলকার নিয়ে সচেতনতা তিমিরেই। ব্যক্তিগত গাড়িই ছুটছে পুলকার হিসেবে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ সত্বেও উইন্ডস্ক্রিনে লাগানো হয়নি গাড়ির ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’।
পুলকারকে নিয়মে বাঁধার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এই নিয়ে পরিবহণ দফতরের ভূমিকার সমালোচনাও কম হচ্ছে না। শনিবার শ্রীরামপুরে ঋষভের শেষকৃত্যে এসে রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভেবে অবাক হচ্ছিলাম, একটা পুলকার কী ভাবে চলছে! তার ফিটনেস ছিল? মাঝপথে গাড়ি বদল হয় কী করে? আমার মনে হয়, রাজ্য সরকার এই নিয়ে নিশ্চিত ভাবে ভাবছে। কোনও একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।’’ শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলকারটির গতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ঋষভের মৃত্যুতে পুলকার নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তাও বেড়েছে। পান্ডুয়ার স্বপ্না চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমার ছেলে পুলকারে স্কুলে যায়। তাতে অতিরিক্ত পড়ুয়া তোলা হয়। গাড়িটি মাঝেমধ্যেই খারাপ হয়ে যায়। দুশ্চিন্তায় ভুগি।’’ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক পীযূষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলকারগুলি বেপরোয়া ভাবে চলে। পুলিশ-প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার। শুধু বাণিজ্যিক গাড়িই যাতে পুলকার হিসেবে চলে, তা-ও দেখা উচিত।’’
হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার তথাগত বসু বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক গাড়িকেই পুলকার করার বিষয়ে অভিযান চলছে।’’ চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, পুলকারকে নিয়মে বাঁধতে স্কুলে অভিযান চালানো হবে।
শনিবার দুপুরে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে এক পুলকার-চালককে দেখা গেল, এক হাতে স্টিয়ারিং, অন্য হাতে মোবাইল ফোন ধরে কথা বলছেন। গাড়িতে পড়ুয়াদের তোলা হয়েছে গাদাগাদি করে। হাওড়া গ্রামীণ জেলার ডিএসপি (ট্র্যাফিক) আলি রাজা মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা দু’-তিন দিনের মধ্যে সব স্কুলে পুলকার চালক এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। তার পরেও চালকরা নিয়ম ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যাঁর বেপরোয়া গাড়ি চালানো নিয়ে পুলকার নিয়ে চর্চা বেড়েছে, পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই গাড়ির চালক পবিত্র দাস এখনও জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর শ্বশুর নেপাল সাহা বলেন, ‘‘পবিত্র পাঁচ-সাত বছর ধরে গাড়ি চালাচ্ছে। কার গাড়ি চালাত, জানি না। আর কিছু বলতে পারব না।’’ পরিবারের লোকেরা জানান, গোটা ঘটনার জেরে পবিত্রর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।