পরিস্থিতি সামলাতে বোঝাচ্ছেন পুলিশ আধিকারিক। রবিবার স্কুল চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরীক্ষা ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন (ডিএলএড)-এর প্রশ্ন ফাঁস ও পরীক্ষাকেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ঘিরে রবিবার ধুন্ধুমার বাধল হাওড়ার একটি স্কুলে। সময় মতো পরীক্ষা শুরু না হওয়া এবং সিট না পাওয়ার অভিযোগ তুলে পরীক্ষার্থীদের একাংশ প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলায় প্রথম দফার পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ফের পরীক্ষা চালু করতে গেলে আর একদল পরীক্ষার্থী বাধা দেন বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠি চালিয়ে তাঁদের পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে বার করে দিলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং (এনআইওএস) কর্তৃপক্ষ।
গত ২০-২১ ডিসেম্বর ছিল দেশ জুড়ে ডিএলএডের তৃতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা। তাতে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে ২৬ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শুধু পশ্চিমবঙ্গে দু’টি বিষয়ে পরীক্ষা বাতিল করে এনআইওএস। ঠিক হয়, রবিবার ৩ ফেব্রুয়ারি ফের ওই দু’টি বিষয়ে পরীক্ষা হবে। সেই অনুযায়ী এ দিন হাওড়ার বিভিন্ন স্কুলে ওই পরীক্ষার সিট পড়েছিল। বাকি পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে স্বাভাবিক ভাবে পরীক্ষা হলেও হাওড়া ময়দানের কাছে একটি স্কুলে শুরু থেকেই গোলমাল বাধে। স্কুল সূত্রের খবর, সেখানে সিট পড়েছিল ৯৭৭ জনের। সেই মতো বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, শনিবার রাত ১২টার পরেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। ভোর থেকেই পরীক্ষার প্রশ্ন তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপে চলে আসে।
উলুবেড়িয়া থেকে আসা এক পরীক্ষার্থী মিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও স্কুলের গেট খোলা হয় সওয়া ন’টা নাগাদ। আমরা ভিতের গিয়ে রোল নম্বর অনুযায়ী সিটে বসতে গিয়ে দেখি, অধিকাংশ সিট নম্বর মিলছে না। অনেকের সিট নম্বরই নেই। এ দিকে কয়েকটি ঘরে তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে।’’
এর পরেই গোলমাল শুরু হয়। অভিযোগ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাত থেকে খাতা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলতে শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। হুড়োহুড়িতে তিন পরীক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশে খবর দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিশাল বাহিনী নিয়ে ছুটে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। খবর দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের এনআইওএস-এর পক্ষে রাজ্যের দায়িত্বে থাকা চিফ কো-অর্ডিনেটর তাপসী গোস্বামীকে। তাঁর ও পুলিশের প্রচেষ্টায় দুপুর ১টার পরে প্রথম দফার পরীক্ষা শুরু করার চেষ্টা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিযোগ, ফের একদল পরীক্ষার্থী ক্লাসে ঢুকে অন্য পরীক্ষার্থীদের থেকে খাতা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের বার করে দেয়। এর পরে আর পরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন এনআইওএস কর্তৃপক্ষ।
চিফ কো-অর্ডিনেটর তাপসী গোস্বামী বলেন, ‘‘এখানকার পরিস্থিতির খবর পেয়ে এসেছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম পরীক্ষা শুরু করার। কিন্তু গোলমাল হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারলেন না, তাঁদের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’’
স্কুলের তরফে পরীক্ষার কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ পোদ্দার বলেন, ‘‘সিট নম্বর না মেলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়। পরীক্ষা সময় মতো শুরু হয়েছিল। সিটের নম্বরও ঠিক ছিল। কিছু পরীক্ষার্থী পরীক্ষা না দিতে চাওয়ায় এই গোলমাল হয়েছে।’’