শ্যামপুরের বাছরিতে বিক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
রেহাই মিলল না মঙ্গলবারেও। গুজবের জেরে গ্রামীণ হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত হলেন এক মহিলা-সহ সাত জন।
শুরুটা হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। এলাকায় ঘুরছে ছেলেধরা, কিডনি পাচারকারী, চোর— এমনই নানা গুজবকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগে দক্ষিণ ৩৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় অচেনা, অপরিচতদরে মারধর করা হচ্ছিল। একই প্রবণতা ক’দিন ধরে চলছে হাওড়াতেও। পুলিশ সোমবার বিকেল থেকে গুজবের বিরুদ্ধে জেলা জুড়ে শুরু মাইক-প্রচার শুরু করে। হ্যান্ডবিল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপেও চলছে প্রচার। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু গুজবের জেরে এলাকায় এলাকায় আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়নি।
মঙ্গলবার বেলা ১টা নাগাদ শ্যামপুরের বাছরিতে ছেলেধরা সন্দেহে দুই যুবককে গ্রামবাসীদের একাংশ আটকে রেখে বেধড়ক পেটায়। দুই যুবক দাবি করেছিলেন, তাঁরা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমীক্ষা করতে এসেছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েকটি বাড়িতে ওই দুই যুবক গিয়ে বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করছিলেন। বাড়িতে খড়ি দিয়ে নম্বর দিচ্ছিলেন। এরপরেই তাঁদের ধরে মারধর শুরু হয়। খবর পেয়ে গড়চুমুকের সিআই রাজা মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ যায়। কিন্তু পুলিশ ওই দু’জনকে উদ্ধার করতে পারেনি। প্রায় দু’ঘন্টা এই অবস্থা চলার পরে র্যাফ গিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। এক পুলিশকর্তা জানান, দুই যুবক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেননি বলেই বিপত্তি হয়।
ওই ঘটনার এক ঘণ্টা পরে আবার শিবগঞ্জে আক্রান্ত হন এক বৃদ্ধ। তিনি ভিক্ষা করেন। শিবগঞ্জে একটি মন্দিরে পুজো হচ্ছিল। তিনি ভিক্ষা করতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি প্রসাদও খান। তারপরেই এক যুবক তাঁকে লক্ষ করে ছেলেধরা, এ কথা রটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ওই যুবকের প্ররোচনায় বৃদ্ধকে অন্যেরা ধরে বেধড়ক পেটায়। তাঁর নাক ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁকে একটি ক্লাবে আটকে রাখা হয়। যাঁরা ছাড়াতে যান তাঁদেরও হামলাকারীরা মারধরের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত এক সিভিক ভলান্টিয়ার শ্যামপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে। গ্রামীণ জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, মারধরে জড়িতদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের ধরা হবে। ওই বৃদ্ধের বাড়ি পাশের গ্রাম ভগবানপুরে। তিনি অসুস্থ। ভিক্ষা করে খান। বেলা ৩টে নাগাদ বাগনান-২ ব্লকের দেউলটি গ্রামেও দুই যুবককে ধরে বেধড়ক মেরে আটকে রাখা হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। ডোমজুড়ের সলপ ও রাজাপুরে চোর সন্দেহে একজন পুরুষ ও মহিলাকে মারধর করা হয়।
গুজব রুখতে ডোমজুড়ে প্রচার পুলিশের।
গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, খুব সংগঠিত ভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা সত্ত্বেও সোমবার রাতে উলুবেড়িয়া-১ ব্লক অফিসের সামনের মহল্লায় লাঠিধারী একদল যুবক এসে একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে তন্ন তন্ন করে ছেলেধরা খুঁজতে থাকে। ওই রাতেই আমতা এবং উদয়নারায়ণপুরেও বঁটি, কাটারি এবং লাঠি হাতে গ্রামবাসীদের একাংশ ছেলেধরা খুঁজতে বেরোয়। গুজব ছড়িয়েছে ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর এবং সাঁকরাইলেও। মঙ্গলবার দুপুরে শ্যামপুরের অনন্তপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একদল মহিলা গ্রামের রাস্তা ঘিরে দাঁড়িয়ে। অচেনা কাউকে দেখলেই তাঁরা জেরা করছেন। পুলিশ জানায়, শুধু অনন্তপুর নয়, নানা জায়গাতেই মহিলারা রাস্তায় পাহারা শুরু করেছেন।
—নিজস্ব চিত্র।