পরিষেবা ভাল, দাবি কল্যাণের

অস্বস্তির সেই জগৎবল্লভপুর হাসপাতাল

যেন জঙ্গলের মধ্যে কোনও পরিত্যক্ত ভবন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
Share:

অব্যবস্থা: ১) হাসপাতাল ঢেকেছে ঝোপে। ভেঙে পড়ে রয়েছে নলকূপও।

যেন জঙ্গলের মধ্যে কোনও পরিত্যক্ত ভবন!

Advertisement

চারদিকে বর্জ্য ও পার্থেনিয়াম গাছ। দোতলা মূল ভবনটিই শুধু নীল রং করা। তার চারপাশ ঘিরে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাঙা আবাসন। সেখানে কেউই থাকেন না।

সামনের পুকুর বন-জঙ্গলে ভর্তি। রোগীদের বিশ্রামকক্ষের চেয়ারে ধুলোর পুরু স্তর। নলকূপ একটিই। তা-ও বিকল। মহিলা-প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, অ্যানাস্থেটিস্ট এবং শিশু বিশেষজ্ঞ নেই। ফলে, দু’মাস ধরে বন্ধ ‘সিজার’। বন্ধ বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচিও।

Advertisement

এই ছবি জগৎবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালের। যে হাসপাতাল নিয়ে জগৎবল্লভপুরের শঙ্করহাটি-১ পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলেরই সুমিত্রা পণ্ডিতের তোলা প্রশ্নে মঙ্গলবার জগৎবল্লভপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার তাল কেটেছিল। যে হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে রোগী এবং গ্রামবাসীদের অভিযোগ বিস্তর।

ওই হাসপাতালে ‘সিজার’ বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস। তবে, আর কোনও অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘মহিলা-প্রসূতি বিশেষজ্ঞ, অ্যানাস্থেটিস্ট এবং শিশু বিশেষজ্ঞ আনার চেষ্টা হচ্ছে। চিকিৎসকের কোনও অসুবিধা নেই। পরিষেবা নিয়ে অন্য কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’’

যদিও শ্রীরামপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘ওই হাসপাতালের পরিষেবা ভাল।’’

এমন অপরিচ্ছন্ন বিছানাতেই থাকতে বাধ্য হন রোগীরা। অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপরিষ্কার পর্দা। নিজস্ব চিত্র

জেলার প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে ‘সিজার’ করে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থা আছে এখানেও। আছে অপারেশন থিয়েটার (ওটি)-সহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি।কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তিনটি পদ শূন্য থাকায় ‘সিজার’ বন্ধ। প্রসূতিরাও আর সে ভাবে আসেন না। তা ছাড়াও গ্রামবাসীর অভিযোগ, হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলেই ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। অথচ ৬০টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতাল থেকে বিনা পয়সায় ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের অধিকাংশ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে বলা হয়।

রোগীর আত্মীয়েরা যাতে রাতে থাকতে পারেন, সে জন্য ২০০৪ সালে তৎকালীন বিধায়ক বিমান চক্রবর্তীর বিধায়ক তহবিলের টাকায় একটি দোতলা বিশ্রামকক্ষ তৈরি করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধানের অভাবে সে জায়গার অবস্থাও শোচনীয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দিনেরবেলা এখানে গরু-ছাগল রাখেন। রাতে মদের ঠেক বসে বলে অভিযোগ। ওই বিশ্রামকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, বহুদিন ঝাঁট না-পড়ায় চেয়ারগুলিতে ধুলো জমেছে। কুকুর শুয়ে রয়েছে। হাসপাতালের সামনে কিছু কংক্রিটের চেয়ার পার্থেনিয়াম গাছে ছেয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের ভিতরটাও একই রকম অপরিষ্কার। রোগীর আত্মীয়দের বক্তব্য, রাতে থাকার দরকার হলে তাঁদের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হয়। খেতে হয় মশার কামড়। নলকূপ বিকল হয়ে যাওয়ায় পানীয় জলের প্রয়োজন হলেও তাঁরা পান না।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখানে কোনও সাফাইকর্মী নেই। দু’জনকে রাখা হয়েছে চুক্তির ভিত্তিতে। কিন্তু তাঁদের পক্ষে পুরো হাসপাতাল সাফ করা সম্ভব নয়। ঘাটতি মেটাতে এই কাজ করতে আয়াদের চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আয়ারা কোনও বেতন পান না। প্রসূতিদের পরিবার থেকেই তাঁদের কিছু টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু আয়াদের সংখ্যাও কম। মাত্র ছ’জন। পনেরো দিন অন্তর তাঁরা হাসপাতালের মেঝে ধুয়ে দেন।

একজন আয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘এটা আমাদের কাজ নয়। কাজটি করতে বাধ্য করা হয়। না হলে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হবে হুমকি দেওয়া হয়। প্রসূতির সংখ্যা কমে যাওয়ায় আমাদের আয় কমেছে। তার উপরে যদি বের করে দেওয়া হয় সেই আয়টুকুও চলে যাবে। তাই ভয়ে সাফাইয়ের কাজ করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন