রাজার মৃত্যুর তদন্তে কমিশন গড়ল সাই

শ্রীরামপুরের তারাপুকুরের বাসিন্দা রাজাকে খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ইতিমধ্যেই এলাকার তৃণমূল নেতা পিন্টু নাগ-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১০
Share:

মোমবাতির আলোয় স্নেহাশিস দাশগুপ্ত স্মরণ।

পোর্ট ট্রাস্টের গোলরক্ষক স্নেহাশিস দাশগুপ্ত ওরফে রাজার মৃত্যু-মামলায় এ বার তদন্ত কমিশন গঠন করল সাই ( স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া )। কারণ তিনি সাইতে অনুশীলন করতেন। সাই সূত্রের খবর, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিশন তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

Advertisement

ওই কমিটিতে রয়েছেন আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শনিবার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টির তদন্তে। নির্দিষ্ট সময়ে সেই তদন্তের পর আমরা রিপোর্ট জমা দেব।’’

শ্রীরামপুরের তারাপুকুরের বাসিন্দা রাজাকে খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে ইতিমধ্যেই এলাকার তৃণমূল নেতা পিন্টু নাগ-সহ চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার রাজার পরিবারের লোকজন দাবি করেন, নবমীর রাতে অনেকেই রাজাকে মারধর করেছিল‌। সবাইকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।

Advertisement

রেল পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা অবশ্য মেপে পা ফেলতে চাইছেন। রেল পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, চার জনকে ধরার পাশাপাশি নবমীর রাতে রাজার ছেঁড়া ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর যে এলাকায় বাড়ি সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে, ঘটনাক্রম মিলিয়ে নিয়ে এখন একশো ভাগ নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তে রাজার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। তবে মারধর বা আঘাত রাজার মৃত্যুর কারণ নয়। দশমীর ভোরে তাঁর দেহ মিলেছিল রেললাইনের ধার থেকে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায়। শনিবার রেল পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চেয়ে বিধিবদ্ধ আবেদন করেছি। ওই রিপোর্ট এখনও হাতে পাইমি। রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ পাশাপাশি, বিষয়টির ফরেনসিক তদন্তের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।

তরুণ এই ফুটবলারের মৃত্যু নিয়ে শহর জুড়ে চর্চা চলছেই। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে রাস্তার মোড়— সর্বত্রই এ নিয়ে আলোচনা। রাজার বন্ধুরা পুলিশকে জানান, নবমীর রাতে রাজার সঙ্গে বন্ধুদের মারামারি হয়। রাজা বাড়ি ফিরে যান। অভিযোগ, সেই সময়ে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী নাগ ও তাঁর স্বামী পিন্টুবাবু দলবল নিয়ে গিয়ে রাজাকে মারধর করেন। রাজা ভেঙে পড়েছিলেন। বন্ধুরা পুলিশকে জানান, গভীর রাতে তাঁরা রাজাকে রাজ্যধরপুর গভর্নমেন্ট কলোনিতে এক বন্ধুর বাড়িতে শুইয়ে দিয়ে আসেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। রাত ৩টে ৫৩ মিনিটে রাজার ফেসবুক থেকে একটি পোস্ট করা হয়, যাতে রাজা ‘আত্মঘাতী’ হতে চলেছেন, এমন ইঙ্গিত ছিল। ওই সময়ে এক বন্ধুর সঙ্গে রাজার ফোনে কথাও হয়। এর ঘণ্টা দেড়েক পরেই শ্রীরামপুর মাল গুদামের কাছে রেললাইনে দেহ মেলে।

রাজ্যধরপুরে বন্ধুর বাড়ি থেকে বেরনো এবং রেললাইন থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার— এর মাঝের সময়ে রাজা কোথায় ছিলেন? কোন পথেই বা তিনি মাল গুদামের কাছে পৌঁছলেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর এখনও অধরা। রেল পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘ ঘটনাক্রম অনুযায়ী পুরো ঘটনা সাজানোর চেষ্টাই করা হচ্ছে। সব দিক দেখেই তদন্তের কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন