এ ভাবেই পাচার হচ্ছে বালি।—নিজস্ব চিত্র।
নদী থেকে বৈধভাবে বালি তোলার ক্ষেত্রে সরকারি অনুমতি নিয়ে জটিলতা সম্প্রতি কেটেছে। হুগলি জেলা প্রশাসনের তরফে বালি খাদ ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এরই মাঝে বালি চুরিতে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের দুই নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের একজন আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান কাজি নিজামুদ্দিন এবং অন্যজন ওই পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল।
পঞ্চায়েতের নাম ভাঁড়িয়ে বালি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে দ্বারকেশ্বর নদীর বালি তোলার ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে সরব হলেন তিরোল পঞ্চায়েতেরই সদস্যদের একাংশ। দলীয় নেতৃত্ব এবং জেলা প্রশাসনের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘বেআইনি বালি তোলার ক্ষেত্রে সর্বত্রই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরামবাগের ঘটনা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার কিছু বালি ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এই বালি লুঠের কারবার শুরু হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। তিরোল পঞ্চায়েত এলাকার পারআদ্রা এবং কীর্তিচন্দ্রপুর মৌজায় সংলগ্ন বাপুজীনগর এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বরকেশ্বর নদীর চর থেকে প্রতিদিন শ’দুয়েক ট্রাক্টর এবং গরুর গাড়িতে পাচার হয়ে যাচ্ছে সেই বালি। তার উপর রাস্তায় বালি আটকে পুলিশি জুলুম সামলাতে আবার আরামবাগ পুরসভার গাড়ি পার্কিং স্লিপ দিয়ে আরও অতিরিক্ত পঞ্চাশ টাকা আদায় করা হচ্ছে। পুরসভার গাড়ি পার্কিং স্লিপ পঞ্চায়েত এলাকায় কী ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
গোটা বিষয়টা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিরোল পঞ্চায়েতের সদস্য তথা জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি বর্ষীয়ান আব্দুস সুকুর এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সদস্য গোলাম আম্বিয়া, কান্ত সরেন, ভীষ্মদেব কোনার প্রমুখ। প্রতিবাদীদের তরফে আব্দুস সুকুরের অভিযোগ, “পঞ্চায়েতের কর আদায়ের নাম করে লুঠ হওয়া বালির ট্রাক্টর পিছু ৫০০ টাকা এবং গরুর গাড়ি প্রতি ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। নদীর বালি তোলার বিষযে পঞ্চায়েতের কোনও এক্তিয়ার নেই। অথচ পঞ্চায়েতের কর আদায়ের নামে বালি ব্যবসায়দের কাছ থেকে যে তোলা আদায় করা হচ্ছে তা না ঢুকছে পঞ্চায়েতে, না সরকারি কোষাগারে। সবটাই নিজেরাই আত্মসাৎ করছে পঞ্চায়েত প্রধান ও অঞ্চল সভাপতি। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছি।”
বেআইনি ভাবে বালি তোলার অভিযোগ স্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান কাজী নিজামুদ্দিন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা যে বেআইনি তা জানি। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় সরকারি কাজের জন্য দলগতভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বালি তোলা হচ্ছে।” অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডলও দলগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্বীকার করেছেন, ‘‘এমনিতেই বালি চুরি হচ্ছিল। পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল মজবুত করতেই আমরা একটা টাকা নিচ্ছি।”
দলের প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা আরামবাগ পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, ‘‘বেআইনি বালি তোলার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ যুক্ত আছে কিনা খোঁজ নিচ্ছি। অবিলম্বে যাতে বালি তোলা বন্ধ হয় সে বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’