শিক্ষিকা নিয়োগ কবে, প্রশ্ন ফুরফুরার স্কুলে

প্রধান শিক্ষিকা মৃদুলা হালদার বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরে বহু চিঠি দিয়েছি। এলাকার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়োগ কেন‌ হচ্ছে না, জানি না। ছাত্রীদের ক্ষতি হচ্ছে।’’

Advertisement

প্রকাশ পাল

জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১২
Share:

শিক্ষিকার আসন শূন্য। ক্লাসের সময় বসেই থাকে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

শিক্ষিকার আসন শূন্য। ক্লাসের সময় বসেই থাকে ছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

Advertisement

পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচশোরও বেশি। শিক্ষিকা সাকুল্যে পাঁচ জন। তার মধ্যে এক জন পার্শ্বশিক্ষিকা। এক জন কর্মশিক্ষার।

দিনের পর দিন এ ভাবেই চলছে ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়। নেই অঙ্ক, বিজ্ঞান বা ইংরেজির শিক্ষিকা। দিনে সব ক’টি ক্লাস হওয়া ছাত্রীদের কাছে স্বপ্ন! ক্লাসে পড়ার সুযোগ না-পেয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে মেয়েরা। আগামী বছর এখানকার ৮৫ জন ছাত্রী মাধ্যমিকে বসবে।

Advertisement

এই অবস্থায় জন্য ছাত্রীর সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমছে বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষিকা মৃদুলা হালদার বলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরে বহু চিঠি দিয়েছি। এলাকার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়োগ কেন‌ হচ্ছে না, জানি না। ছাত্রীদের ক্ষতি হচ্ছে।’’ স্কুল সভাপতি গণেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা আবেদন করছি। কিন্তু নিয়োগের বিষয়টি তো আমাদের
হাতে নেই।’’

স্কুল সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে জেলা বিদ্যা‌লয় পরিদর্শকের দফতরের তরফে পরিদর্শন করা হয়। আটটি পদের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানোও হয় তৎকালীন বিদ্যালয় পরিদর্শকের তরফে। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। বর্তমান জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুব্রতকুমার সেন সদ্য পদে যোগ দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, ‘‘সমস্যার সমাধান করতে নিশ্চয়ই
উদ্যোগী হব।’’

কয়েক দশকের প্রাচীন এই স্কুলে প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি ছিল। পরে জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় হয়। ২০১১ সালে মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শিক্ষিকা নিয়োগ হয়নি।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকার পদও পূরণ হয়নি। শিক্ষিকা এতই কম যে, ক্লাসে রুটিনের বালাই নেই। এক জন পাশাপাশি দু’টি ক্লাস নেন। পার্শ্বশিক্ষিকা ইতিহাস পড়ান। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে পারবেন। অর্থাৎ, নবম-দশম শ্রেণিতে ওই বিষয় পড়ানোরও কেউ নেই। অঙ্কের শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন প্রায় দু’বছর হয়ে গেল। জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা অবসর নেন সাড়ে চার বছর আগে।

প্রধান শিক্ষিকা মৃদুলা হালদার ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ সামলে ইংরেজি ক্লাস নেন। কখনও বিজ্ঞান পড়ান। কোনওটাই নিয়মিত হয় না। কোনও শিক্ষিকা ছুটি নিলে
সমস্যা বাড়ে। অভিভাবকদের ক্ষোভ, ফুরফুরার উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে নানা কথা বলা হয়। অথচ, ফুরফুরা পঞ্চায়েতের একমাত্র মেয়েদের স্কুল শিক্ষিকার অভাবে ভুগছে।
শিয়াখালা থেকে জাঙ্গিপাড়ার মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকায় মেয়েদের আর কোনও স্কুল নেই। এলাকাটি আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া। পরিসংখ্যান বলছে, ছাত্রীদের প্রায় ৪২% তফসিলি জাতিভুক্ত। সংখ্যালঘু মেয়েদের হারও প্রায় একই। তফসিলি উপজাতির ছাত্রী প্রায় ৪% এবং ওবিসি ৭.২৫%। সাধারণ জাতিভুক্ত ছাত্রী ৫.৬৮%। শেখ সাইফুদ্দিন স্কুলের গোটের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। তাঁর তিন মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না-থাকায় তিনি স্কুলের সেই সব কাজকর্ম করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি পড়াশোনা জানি না। মেয়েদের মানুষ করতে এখানে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু ক্লাসই তো হয় না।’’

দশম শ্রেণির ছাত্রী ফাহিমা জেসমিন সিদ্দিকি বলে, ‘‘আমার গৃহশিক্ষক নেই। স্কুলই ভরসা। কিন্তু দু’টো বা তিনটের বেশি ক্লাস হয় না। একটাও ক্লাস হল না, এমন দিনও গিয়েছে।’’ একই বক্তব্য অষ্টম শ্রেণির সহেলি ধাড়া, সিমরন খাতুনদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন