ছাত্রীদের আর্তি, দিদিমণি স্কুল ছেড়ে যাবেন না

তবে স্লোগান নেই। কড়া চাহনি নেই। ‘আন্দোলনকারী’দের মুখে অনুনয়। চোখে জল।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০০:২৫
Share:

দাবি: দিদিমণিকে স্কুল ছেড়ে যেতে বাধা। নিজস্ব চিত্র

স্কুল চলছে।

Advertisement

হঠাৎই ‘আন্দোলন’।

তবে স্লোগান নেই। কড়া চাহনি নেই। ‘আন্দোলনকারী’দের মুখে অনুনয়। চোখে জল।

Advertisement

প্রিয় দিদিমণির বদলি আটকাতে এ ভাবেই ‘সরব’ পড়ুয়ারা। সঙ্গে অভিভাবকরাও। সব দেখেশুনে চোখের কোল ভিজল দিদিমণিরও। শুক্রবার এই ঘটনার সাক্ষী রইল শেওড়াফুলির সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যানিকেতন ফর গার্লস।

এই স্কুলে ইংরেজি পড়ান আইভি সরকার। শ্রীরামপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পদে যোগ দেওয়ার নির্দেশ এসেছে তাঁর। গত বুধবার তা জানাজানি হয়। এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ বেশ কিছু অভিভাবক স্কুলে আসেন। মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে আইভিদেবীকে অনুরোধ করতে থাকেন, তিনি যেন এই স্কুলেই থাকেন। তাঁদের হাতের পোস্টারে লেখা ‘আমাদের ছেড়ে যাবেন না’, ‘সিদ্ধান্ত বদলে ফেলুন’, ‘আইভিদির স্কুল ত্যাগ মানছি না’। ছাত্রীর হাতের পোস্টারে আর্তি, ‘আমাদের মাতৃহারা করবেন না’। পোস্টার স্কুল চত্বরে সেঁটেও দেওয়া হয়।

স্কুল চলে সকাল ৬টা ১০ মিনিট থেকে ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। আইভিদেবী তাঁদের জানান, ব্যক্তিগত কারণে এত সকালে তাঁর আসতে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া, বদলি চূড়ান্ত। এই স্কুলেও প্রধান শিক্ষিকার নাম চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকরা জানিয়ে দেন, বদলি আটকাতে প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন। ঘণ্টাখানেক পরে অভিভাবকরা স্কুল ছাড়লেও মেয়েরা দফায় দফায় আইভিদেবীর কাছে আর্জি জানায়। চাঁদনি, শীল, ঈশানী সাহা, সুইটি বাগ প্রমুখ ছাত্রীর বক্তব্য, ওই শিক্ষিকার জন্য পড়াশোনা বা অন্য বিষয়ে উন্নতি হয়েছে। শৃঙ্খলা বেড়েছে।

চাঁদনির বাবা তারকবাবু বলেন, ‘‘উনি মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেশেন। পড়া বোঝান। সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন। গত এক বছর প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়ে স্কুলের চেহারা বদলে দিয়েছেন। উনি যাতে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নেন, প্রয়োজনে শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও যাব।’’ শিবশঙ্কর ঘোষ নামে এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘পড়া বাদে অন্য বিষয়ে উৎকর্ষতা নিয়েও উনি ভাবেন।’’

কোন্নগরের বাসিন্দা আইভিদেবী ২০০২ সালে এই স্কুলে যোগ দেন। মাঝে দু’বছর লিয়েনে অন্য স্কুলে গিয়েছিলেন। এক বছর আগে স্কুলের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের দায়িত্ব নেন। অভিভাবকদের দাবি, স্পোর্টস থেকে অতিরিক্ত ক্লাস, ছাত্রী সংসদ তৈরি, পিছিয়ে পড়া মেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহ বাড়ানো— সব ব্যাপারেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছেন। ছাত্রীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। টিচার ইনচার্জ ঝর্ণা ভদ্র বলেন, ‘‘গোটা স্কুল আইভিকে চায়। ওঁর তত্ত্বাবধানে যে ভাবে স্পোর্টস হয়েছে, সবাই তার প্রশংসা করেছেন।’’

পড়ুয়া-অভিভাবকদের এমন ‘আন্দোলন’ নিয়ে আইভিদেবী নিজে কী বলছেন?

তাঁর কথায়, ‘‘আমি আপ্লুত। দোটানায় পড়ে গেলাম। কিন্তু বদলি চূড়ান্ত হওয়ার পরেও কি করে এখানে থাকা সম্ভব, জানি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্কুলের মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।’’

অনেকেই বলছেন, ইদানিং শিক্ষক-পড়ুয়া-অভিভাবক সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে সমাজে। সেখানে এই ঘটনায় উল্টো ছবি। এই ছবিই কাঙ্খিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন