পুলিশি অভিযােনও ব্যবসা ছাড়তে নারাজ সিঙ্গুর

যখনই রাজ্যের কোনও প্রান্তে চোলাই খেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে, তখনই আলোচনায় উঠে আসে হুগলির সিঙ্গুর ব্লকে এই কারবারের কথাও।

Advertisement

দীপঙ্কর দে ও প্রকাশ পাল

সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:১২
Share:

হানা: সিঙ্গুরে ভাটি ভাঙছে পুলিশ ও আবগারি দফতর। নিজস্ব চিত্র।

যখনই রাজ্যের কোনও প্রান্তে চোলাই খেয়ে মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে, তখনই আলোচনায় উঠে আসে হুগলির সিঙ্গুর ব্লকে এই কারবারের কথাও। চোলাই উৎপাদক জনপদ হিসাবে সিঙ্গুরের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এখানকার আজবনগর, তেলিপুকুর, পলতাগড়ে চোলাই-কারবার চলছে বছরের পর বছর। পুলিশ, আবগারি দফতর ভাটি ভেঙে দিলেও ফের গজিয়ে ওঠে, এমনই অভিজ্ঞতা অনেকের।

Advertisement

শনিবার ভোর থেকে সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ এবং আবগারি দফতর। আবগারি দফতরের হিসেব, প্রায় ১৭০ লিটার চোলাই, চোলাই তৈরির উপকরণ, ১৬৫০ কেজি গুড় নষ্ট করা হয়েছে। ৪০টি ভাটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও অবশ্য এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় এই কারবার বন্ধ হয়ে যাবে, এমন আশ্বাস দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকেরাও। কারবারিদের পরিবারের লোকজনও জানান, এই কাজ থেকে সরে আসার কথা তাঁরা ভাবতে পারেন না।

কিন্তু কেন?

Advertisement

চোলাই তৈরির কাজে যুক্তদের বাড়ির লোকজন সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পাওয়া এবং বিকল্প জীবিকার অভাবকেই দায়ী করেছেন। সিঙ্গুরের বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, ‘‘লেখাপড়া শিখেও ভাল কাজ মেলে না। ছেলেরা পড়াশোনা করে বাড়িতে বসে থাকবে? তা ছাড়া, এখানকার চোলাই খেয়ে কেউ কোনও দিন মারা যাননি।’’ আর এক মহিলা বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়েছি। কিন্তু ভাল কাজ পায়নি। দিনরাত খেটে কারখানায় কাজ করে ২০০ টাকা মজুরিতে। ছেলেরা ভাল কাজ পেলে চো‌লাই তৈরি

করতে হত না।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, এই সব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ চোলাই কারবারের সঙ্গে যুক্ত। মহিলা বা ছোটদেরও কাজে লাগানো হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক এসে চোলাই কিনে নিয়ে যান বিক্রির জন্য। আজবনগরের এক যুবকের কথায়, ‘‘পুলিশ এসে উনুন ভেঙে দেয়। উপকরণ নষ্ট করে দেয়। কষ্টেসৃষ্টে আবার তা বানিয়ে নেওয়া হয়। অন্য কাজ তো জানি না। সরকারি সাহায্যও মে‌লে না।’’

প্রশাসনের আধিকারিকরা এই অভিযোগ মানেননি। ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কাজ চেয়ে কেউ পাচ্ছেন না, এটা ঠিক নয়। কাজ চাইলে প্রশাসনের তরফে অবশ্যই সে ব্যবস্থা করা হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কম খাটনিতে বেশি রোজগারের জন্যই দীর্ঘদিনের এই কারবার হয়তো ওঁরা ছাড়তে চা‌ন না। ওঁদের বোঝানো হবে, যাতে এই কাজ ছেড়ে অন্য জীবিকা বেছে নেন।’’

সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোথায় অভিযান চা‌লানো হয়েছে, আমার জানা নেই। তাই এ ব্যাপারে বলতেও পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন