ভরসা: তৈরি হয়ে গিয়েছে মিলের অন্দর। নিজস্ব চিত্র
‘সঞ্জীবনী সুধা’র খোঁজ চলেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। শেষমেশ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এগিয়ে আশায় প্রাণ ফিরছে শ্রীরামপুরের সুতোকলের। খোলনলচে বদলে যাচ্ছে কারখানার।
নতুন উদ্যমে সেই বদলে হাত লাগাচ্ছেন শ্রমিকেরাই!
রাজ্য সরকার পরিচালিত শ্রীরামপুরের শিমলা এলাকায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অপারেটিভ স্পিনিং মিল’ নামে ওই কারখানার চেয়ারম্যান পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আশা করছি, আগামী এপ্রিল মাসে উৎপাদন চালু হবে। তার মাস আটেকের মধ্যে পুরোদমে কাজ চালু হবে।’’ কারখানার ‘রিং-ফ্রেম’ বিভাগের শ্রমিক সমর পাত্রের গলায় বিস্ময়, ‘‘মিলটা এ ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে স্বপ্নেও ভাবিনি।’’ স্থানীয় বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের দাবি, ‘‘শিল্প মানচিত্রে এটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’
দিল্লি রোডের ধারে রাজ্যধরপুর পঞ্চায়েত ভবনের পাশেই ১১ একর জমিতে এই সুতোকল তৈরি হয় ষাটের দশকে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র সেনের আপ্ত সহায়ক, শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, প্রয়াত শ্যামাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মিলটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষের অদক্ষতা, সরকারি নজরদারির অভাবে বাম আমলের শেষ দিকে সুতোকলটি বেহাল হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে চাহিদা এবং গুণমানের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়নি। বাজারে কয়েক কোটি টাকা দেনা হয়ে যায়। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়ে যায়। প্রচুর টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়ে যায়। ২০১১ সালের ২ জুলাই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে কারখানার চৌহদ্দি ঢেকে যায় ঝোপ-জঙ্গলে। তখন পাঁচশোরও বেশি শ্রমিক ছিলেন। মিল খোলার দাবিতে শ্রমিক
আন্দোলন শুরু হয়।
এর পরেই শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস। প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি তোলেন শ্রীরামপুরের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সঙ্কেত মিলতেই প্রশাসনিক স্তরে নড়াচড়া শুরু হয়। শ্রমিকদের বেতন, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, বিদ্যুতের বকেয়া বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়। শ্রমিকদের বেতন এখনও প্রতি মাসে দিচ্ছে রাজ্য।
পিনাকীবাবু জানান, পুনরুজ্জীবনের জন্য কেন্দ্র সরকারের টেক্সটাইল দফতরের অধীন ‘ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (এনসিডিসি) ৩০ কোটি এবং রাজ্য সরকার চার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। কিছু টাকা এনসিডিসি ভর্তুকি হিসেবেও দিচ্ছে।
দু’বছর আগে কারখানার খোলনলচে বদলানোর কাজ শুরু হয়। পুরনো, অকেজো যন্ত্রপাতি বদলে ইতালি, জার্মানি থেকে
আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়। জীর্ণ শেড বদলে নতুন শেড তৈরি এবং সম্প্রসারণ করা হয়। নতুন প্রশাসনিক ভবনও তৈরি হচ্ছে।
কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি (এমপ্লয়িজ ডিরেক্টর) শেখ রবিউল বলেন, ‘‘ঝোপজঙ্গল সাফ করা থেকে ইট, সিমেন্ট টানা-সহ নানা কাজে কারখানার শ্রমিকেরাই হাত লাগাচ্ছেন।’’ পিনাকীবাবু জানান, গত কয়েক বছরে অনেক শ্রমিক অবসর নিয়েছেন। এই মুহূর্তে শ্রমিক, ম্যানেজমেন্ট স্তরের কর্মী-সহ ৩০৯ জন রয়েছেন। আগামী বছর ৪৮ জন অবসর নেবেন। তখন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি আসায়
উৎপাদনও বেশি হবে।
কারখানার আইএনটিটিইউসি নেতা অমল রায় বলেন, ‘‘সরকার পাশে থাকায় অসাধ্য সাধন হতে চলেছে।’’ মানিকরঞ্জন সাহা নামে এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘এক বছর পরে অবসর নেব। অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে। শ্রমিকদের টাকা বকেয়া থাকছে না। বন্ধের সময় ভেবেছিলাম, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। কারখানা যে আলো ছড়াবে, ভাবিনি।’’