তৃষ্ণা বসু। (ডান দিকে) শোকার্ত বাবা-মা। শনিবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র
বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েকে দুপুরে অল্প সুস্থ দেখে কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন বাবা-মা। তাই মেয়েকে খাইয়ে, গল্প করে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন তাঁরা। এর মধ্যেই হাসপাতাল থেকে খবর আসে, বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে মাথায় চোট পেয়ে আইসিইউ-তে ভর্তি ষোল বছরের ওই কিশোরী। খবর শুনেই তড়িঘড়ি তার বাবা-মা, আত্মীয়েরা হাসপাতালে এসে জানতে পারেন ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে মৃত্যুর প্রকৃত কারণও ঠিক মতো জানানো হয়নি। এর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে রোগীর পরিজনেরা ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ।
শনিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। পরে শিবপুর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানায়, মৃত ওই কিশোরীর নাম তৃষ্ণা বসু (১৬)।
হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকার বাসিন্দা গোপাল বসুর মেয়ে তৃষ্ণা এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই তার পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়। রাতে তা বাড়তে থাকায় তাকে নেতাজি সুভাষ রোডের ওই হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক কিছু ওষুধ দেন। তৃষ্ণার পরিজনেরা জানান, চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ওষুধে যন্ত্রণা না কমলে তাকে ভর্তি করতে হবে। ওষুধ খেয়ে ওই রাতে যন্ত্রণা কমলেও এ দিন সকাল থেকে ফের অসহ্য পেটের যন্ত্রণা হয়। তাই ৮টা নাগাদ তৃষ্ণাকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোপালবাবু জানান, দুপুরে রামরাজাতলার একটি প্যাথোলজিক্যাল সেন্টার থেকে ইউএসজি করে হাসপাতালে ফিরে তাঁদের সঙ্গে গল্পও করেন ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটা খাবার খেল, কত কথা বলল। একটু ভাল আছে দেখে বাড়ি গিয়েছিলাম। ফোন পেয়ে এসে দেখলাম মেয়েটা আর নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ফোনে জানানো হয়েছিল মাথায় চোট পেয়ে আইসিইউ-তে আছে তৃষ্ণা।
তার এক আত্মীয় কমল মিত্র বলেন, ‘‘হাসপাতালে এসে দেখি প্রচুর পুলিশ দাঁড়িয়ে। প্রথমে বলা হল, বিছানা থেকে পড়ে মারা গিয়েছে। পরে বলল, শরীর খারাপ হয়েছিল তাই আইসিইউ-তে দেওয়া হয়েছিল। তিন-চার ঘণ্টা হয়ে গেলেও ঠিক কারণ কেউ বলতে পারলেন না।’’ পরে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুললে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাতাহাতি বেঁধে যায় ওই কিশোরীর পরিজনদের। অভিযোগ, ভাঙচুর হয় রিসেপশনও। ওই হাসপাতালের এক কর্তা অরিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘গাফিলতির অভিযোগ ঠিক নয়। পড়ে যাওয়ার কথা ওঁদের বলা হয়নি। অবস্থার অবনতি হওয়াতে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়।’’
আরএমও সৈকত মান্নার দাবি, আচমকাই তৃষ্ণার পাল্স রেট ও রক্তচাপ কমতে শুরু করে। আইসিইউ-তে নিয়ে সব রকম চেষ্টা করলেও আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর।