বিতর্কিত: আদালতের নির্দেশে ভাঙা হবে এই কার্যালয়ই। নিজস্ব চিত্র
বছরখানেক আগেও যে জমিতে একটি গুমটি ঘর থেকে টালির ব্যবসা চলত, সেখানে গজিয়ে উঠেছিল শাসকদলের দলীয় কার্যালয়। উঠেছিল জমি দখলের অভিযোগ। দু’কামরার সেই কার্যালয়ের গায়ে লেগেছিল নীল-সাদা রং। বসেছিল এসি। আনাগোনা বেড়েছিল দলের নেতাকর্মীদের।
পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালের কাছে জিটি রোডের ধারে তেলিপাড়া মোড়ে তৃণমূলের সেই কার্যালয়ই ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার হুগলির জেলাশাসককে ওই জমিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ওই নির্দেশ কার্যকর হওয়ার কথা। চুঁচুড়া (সদর) মহকুমাশাসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশের কথা পান্ডুয়া থানার পুলিশ ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানকে জানিয়ে দিয়েছি।’’ নির্দেশ নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বিশেষ মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে।’’
আদালতের নির্দেশে খুশি ওই জমির মালিক মইনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল জোর করে আমার জমি নিয়েছিল। ওদের বড় নেতা, থানা—কোথাও সাহায্য না-পেয়ে হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। রায়ে আমরা খুশি।’’ মইনুরের আইনজীবী রামিজ মুন্সি বলেন, ‘‘গরিব মানুষের জমি দখল করে রাখা হয়েছিল। আদালত তা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মইনুরদের বাড়ি ওই জমি থেকে কিছটা দূরে। পারিবারিক ওই জমিতে টালির ব্যবসা শুরু করেছিলেন মইনুরের বাবা। বছর ২০ আগে তিনি মারা যান। তারপর থেকে মইনুর এবং তাঁর ভাইরা ব্যবসার হাল ধরেন। বছরখানেক আগে তৃণমূল নেতা, বর্তমানে পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ কিছু লোকজন এনে গুমটি সরিয়ে মইনুরদের জমি পরিষ্কার করে দলীয় কার্যালয় বানানো শুরু করে দেন বলে অভিযোগ। ভবনের উপরে বড় বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়—‘ব্লক তৃণমূল কার্যালয়’।
সেই কার্যালয়ই এখন ভাঙার নির্দেশ আসায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা হতাশ। জমি দখলের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা সঞ্জয়ের দাবি, ‘‘দলীয় কর্মীরা নিজেদের উদ্যোগে ওই কার্যালয় তৈরি করেছিলেন। আমি সাহায্য করেছিলাম মাত্র। কারও জায়গা দখল করে কার্যালয় হয়নি। আদালতের নির্দেশ মেনে নেব।’’