নবজীবন: ঝিলের মধ্যেই ডিমে তা পাখির। —নিজস্ব িচত্র
কয়েক দিন আগে মাছ-রক্ষায় ঝিলের উপরে পাখির মরণফাঁদ পেতেছিলেন মাছচাষি। ঝিলের কচুরিপানায় পাখির ডিম দেখে সেই চাষিই এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ডিম ফুটে পাখি না-বেরনো পর্যন্ত তিনিওই জলাশয়ে জাল ফেলবেন না।
উলুবেড়িয়ার ফুলেশ্বরে ওই ঝিলে মাছচাষ করেন স্থানীয় বাসিন্দা নব পাত্র। ওই জলাশয়ে চেনা-অচেনা বহু পরিযায়ী পাখি আসে। ঝিলের কচুরিপানায় সংসার পাতে ব্রোঞ্জ উইং জাকানা, নাইট হেরন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা-সহ নানা রংয়ের হরেক প্রজাতির পাখি। ছোট মাছ আর কীটপতঙ্গই তাদের খাদ্য। সেই পাখিদের থেকে মাছ বাঁচাতে ঝিলের উপরে ওই মাছচাষি বিছিয়ে দিয়েছিলেন নাইলনের জাল। সেই জালে ডানা আটকে মৃত্যু হচ্ছিল অনেক পাখির।
পরিবেশ এবং পক্ষীপ্রেমীরা এই কাজের বিরুদ্ধে সরব হন। তারপর প্রশাসন সক্রিয় হয়ে সরিয়ে দেয় জাল। সচেতনতার প্রচারে ময়দানে নামে বন দফতর। মাছ বাঁচাতে পাখির জীবন যাতে বিপন্ন করা না-হয়, সেই লক্ষ্যে বন দফতরের উদ্যোগে ওই এলাকায় প্রচার চলে। বন দফতরের কর্মীরা ও পুলিশ কথা বলেন নববাবুর সঙ্গে। পরিবেশের ভারসাম্য রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝানো হয় তাঁকে। ধারাবাহিক প্রচারের জেরে বদলে গিয়েছেন ওই মাছচাষি।
ঝিল ব্যবহারকারী স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা সম্প্রতি লক্ষ্য করেন, ঝিলের কয়েক জায়গায় ভাসা কচুরিপানায় ডিম পেড়েছে ব্রোঞ্জ উইং। তাঁরা সেই খবর দেন নববাবুকে। তিনিও ঝিলের তিন জায়গায় কচুরিপানার উপরে পাখির ডিম দেখতে পান। এর পরেই নববাবু সিদ্ধান্ত নেন, যতদিন পর্যন্ত ডিম ফুটে বাচ্চা বার না –হবে, ততদিন তিনি ঝিলে মাছ ধরবেন না। তিনি বলেন, ‘‘পাখিতে মাছ খেয়ে নিত বলেই জাল দিয়ে ঝিল ঘিরে রাখতাম। পরে মানুষজন ও বন দফতরের লোকজন আমাকে পরিবেশের বিষয়টি বোঝান। পরিবেশে পাখির গুরুত্ব কতটা, তা এর পরেই বুঝতে পারি।’’ তারপর যোগ করেন: ‘‘পরিবেশে পাখির প্রয়োজন আছে। তাতে যদি আমার কিছু মাছের ক্ষতি হয় হোক। তবু জাল দিয়ে ঝিল ঘিরে রাখব না। যতদিন পর্যন্ত ওই পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের না-হয় ততদিন ঝিলে জাল ফেলব না।’’
ঝিলে বাসা বাঁধা পাখিদের বিরক্ত না-করার আবেদনও এলাকাবাসীর কাছে জানিয়েছেন নববাবু। স্থানীয় বাসিন্দা শীতল বাগ বলেন, ‘‘ জলাশয়ে বহু নাম না-জানা পাখি আসে। তাদের মানুষজন বিরক্ত করে। শীতের সময়ে অনেক পরিযায়ী পাখিও আসে। মানুষ তাদের শিকার করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসী ঠিক করেছেন, এলাকার কোনও পুকুর বা ঝিল নাইলনের সুতো দিয়ে ঘেরা হবে না। পাখি পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে।’’
গ্রামবাসীর ভূমিকায় খুশি বন দফতর। উলুবেড়িয়া বন দফতরের রেঞ্জ আধিকারিক সুকুমার সরকার বলেন, ‘‘পরিবেশ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষ সচেতন হয়েছে। বন দফতরের পক্ষ থেকে ওই মৎস্যচাষিকে ধন্যবাদ জানাই।’’