বাড়িতে অত্যাচার, শিশুর সুরক্ষায় প্রশাসন

নিজের বাড়িতেই শিশুর উপর অত্যাচারের ঘটনা নতুন নয়। কখনও মেয়ে হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধে’, কখনও সৎ ছেলে বা মেয়ে হওয়ায়, কখনও বাবা বা মায়ের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে অত্যাচার সইতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা কিছু বলতে পারে না।

Advertisement

প্রকাশ পাল

চণ্ডীতল‌া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০০:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

দোরগোড়ায় সরকারি লোকজনকে দেখে মেজাজ আরও বিগড়ে গিয়েছিল‌ সাবিনা বেগমের (নাম পরিবর্তিত)। সকলের চোখের সামনেই নিজের একরত্তি মেয়েটাকে তুলে কার্যত মাটিতে আছড়ে

Advertisement

ফেললেন তিনি।

দিন কয়েক আগে হুগলির চণ্ডীতলার একটি গ্রামের ঘটনা। প্রশাসন বাচ্চাটির সাহায্যার্থে এগিয়ে আসে। পরিবারের লোকেরা জানান, সাবিনা মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসা করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সাবিনার বাবা।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রের খবর, পাঁচ বছরের মেয়ের উপর মা অত্যাচার করেন, সূত্র মারফত এই খবর আসে চাইল্ড লাইনে। তাদের তরফে বিষয়টি বিডিও (চণ্ডীতলা ২) তথা ‘ব্লক লেভে‌ল চাইল্ড প্রটেকশন কমিটি’র সম্পাদক অপরাজিত পাল এবং জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে জানানো হয়। বিডিও ওই বাড়িতে চাইল্ড লাইন এবং পুলিশকে নিয়ে। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যেতেই দেখলাম, মহিলা মেয়েটাকে আছাড় মারলেন। ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। শুনলাম, মেয়ের উপর মা এমনই অত্যাচার করেন।’’

বিডিও-র তত্ত্বাবধানে মহিলার কাউন্সেলিং করানো হয়। প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, মহিলার বাবা তাঁর চিকিৎসা করাতে চাইতেন না। তিনি ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাসী। প্রশাসনের তরফে তাঁকেও বোঝানো হয়। তিনি মেয়ের চিকিৎসা করাতে সম্মত হন। এই মর্মে মুচলেকাও দেন। দশ মাসের ছেলে কোলে চিকিৎসার জন্য আপাতত বাপের বাড়িতে গিয়েছেন মহিলা। প্রশাসন চায়, তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটি অন্যত্র ভালভাবে বড় হোক। মেয়েটিকে বিশেষ হোমে রাখার প্রস্তাব দেওয়া দেওয়া হয়। তবে অভিভাবকরাই আপাতত ওই খুদেকে আগলে রেখেছেন। বিডিও জানান, শিশুটির পরিচর্যায় ত্রুটির অভিযোগ পেলে প্রশাসন পুনরায় হস্তক্ষেপ করবে। জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির এক আধিকারিক বলেন, ‘‘চণ্ডীতলার শিশুটির প্রতি আমরা নজর রাখব।’’

নিজের বাড়িতেই শিশুর উপর অত্যাচারের ঘটনা নতুন নয়। কখনও মেয়ে হয়ে জন্মানোর ‘অপরাধে’, কখনও সৎ ছেলে বা মেয়ে হওয়ায়, কখনও বাবা বা মায়ের মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে অত্যাচার সইতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই শিশুরা কিছু বলতে পারে না।

এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কী করণীয়?

প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথমত, অত্যাচারিত শিশুকে হোমে রাখা যেতে পারে। ছ’বছরের কম বয়সীদের জন্য বিশেষ হোম রয়েছে। ছয় থেকে আঠেরো বছর বয়সীদের জন্য সাধারণ হোম। দ্বিতীয়ত, শিশুর দায়িত্ব মায়ের পরিবর্তে অন্য পরিজনকে দেওয়া। তৃতীয়ত, বাড়ির লোকজনকে কাউন্সেলিং করানো। অত্যাচারের মাত্রা বেশি হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শিশুর উপর অত্যাচারের অধিকার কারও নেই।’’

কয়েক মাস আগে পান্ডুয়ায় সৎমায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে দুই নাবালক ভাইবোনকে মারধর করার। সম্প্রতি এই জেলাতেই ছেলের উপর মায়ের অত্যাচারের আরও একটি ঘটনা প্রশাসনের গোচরে আসে। এমন উদাহরণ আরও আছে। শিশুর উপর নির্যাতনের খবরর মিললেই হস্তক্ষেপ করা হবে, সাফ জানাচ্ছে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন