Serampore

১৫৩ বছরের স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ৪৬

এক সময়ে শ্রীরামপুরের বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ছাত্র ছিল।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৭
Share:

ফাঁকা: বিশাল স্কুলভবন। পড়ুয়া হাতে গোনা। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে শ্রীরামপুরের বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ছাত্র ছিল। দেড় দশক আগেও শ’তিনেক ছেলে পড়ত। সেই সংখ্যা এখন ৪৬!

Advertisement

১৩টি শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ক্লাসরুম, খেলার মাঠ রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ১১ জন। ইতিহাসের শিক্ষকের পদ সম্প্রতি খালি হয়েছে। করণিক ১ জন। গ্রন্থাগারিক নেই। ফলে, গ্রন্থাগার অচল। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও নেই। আশপাশের অনেক স্কুল উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হলেও বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যা‌লয় হয়নি।

এটাই কী ছাত্রসংখ্যা কমার কারণ?

Advertisement

বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপিত হয় ১৮৬৭ সালে। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই স্কুলটি ধুঁকছে। প্রাথমিক বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। মাধ্যমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক জগদীশ শর্মা মনে করেন, মাধ্যমিকের পরে ভর্তির নিশ্চয়তা থাকায় অনেকেই ছেলেমেয়েকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করান উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে। প্রাথমিক বিভাগ উঠে যাওয়ায় ‘সাপ্লাই লাইন’ও বন্ধ। দ্বিতীয়ত, তা ছাড়া, কিছু স্কুলের প্রতি মোহের কারণে অভিভাবকেরা সুযোগ পেলে ছেলেমেয়েকে সেখানে নিয়ে যান।

শুধু জগদীশবাবুই নন, সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলে পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা বলছেন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত আরও অনেকে। তাঁদের মতে, স্থানীয় ছেলেমেয়েরা নির্দিষ্ট স্কুলে ভর্তি হবে, এমন নিয়ম থাকলে কোনও স্কুলকে পড়ুয়ার অভাবে ভুগতে হত না। শ্রীরামপুরের একটি বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের পদ শূন্য। ঝাড়ুদার নেই। শৌচাগার অপরিষ্কার থাকে। ইংরেজি মাধ্যমগুলিতে তা হয় না। সচ্ছল পরিবারের বাবা-মায়েরা বাংলা মাধ্যমের কথা ভাবতেই পারছেন না।’’ হুগলির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রী-সহ প্রশাসনিক নানা বিষয়ের হিসেব রাখতেই আমি জেরবার। আমার স্কুলে শিক্ষিকা খুবই কম। কিন্তু আমি পড়াতে পারি না। কান্না পায়।’’ এক প্রধান‌ শিক্ষকের খেদ, ‘‘মিড-ডে মিল নিয়ে যত পরিদর্শন হয় পড়াশোনা নিয়ে তার সিকিভাগও নয়।’’

অভিভাবকেরা কী বলছেন?

অনেকেরই ধারণা, বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনার মান কমেছে। ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষিত ছেলেমেয়ে অনেক বেশি ‘স্মার্ট’। শ্রীরামপুরের চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা আশিস চট্টোপাধ্যায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়েছেন। বেসরকারি সংস্থার চাকুরে আশিস কিন্তু ছেলেকে তাঁর স্কুলে ভর্তি করাননি। ছেলে মাহেশের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া। আশিসের কথায়, ‘‘কাজের সূত্রে কলকাতা-সহ নানা জায়গায় দেখেছি, ইংরেজিতে দক্ষতা কতটা জরুরি। বাংলা মাধ্যমে পড়লে এই দক্ষতা হয় না।’’

বাংলা মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মূলত ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর প্রবণতাকেই চিহ্নিত করছেন জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। তবে, পরিকাঠামোর অভাবের বিষয়টি তাঁরা মানছেন না। তাঁদের দাবি, গত কয়েক বছরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিক্ষাক্ষেত্রে বহু ক্ষেত্রেই সমস্যা মিটেছে। এর সুফল অদূর ভবিষ্যতেই মিলবে।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক লক্ষ্মীধর দাস বলেন, ‘‘এই জেলার কোনও স্কুলে পরিকাঠামোর সমস্যা তেমন নেই। এই খাতে পর্যাপ্ত টাকাও আসছে। শিক্ষকের ঘাটতি তেমন নেই। কারণ, গত দু’-এক বছরে অনেক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। বাকি শূন্যপদেও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। গত কয়েক বছরে কিছু বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমেও পঠ‌নপাঠন চালু হয়েছে। আরও কিছু স্কুলে তা চালুর চেষ্টা চলছে।’’

কঠিন পরিস্থিতিতে বল্লভপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে হিন্দি মাধ্যমের হাত ধরে। শহরে হাজার পঞ্চাশ হিন্দিভাষী মানুষের বাস হলেও সরকারপোষিত হিন্দি মাধ্যম বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৮ সালে ওই স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি মাধ্যমে পড়া চালু হয়। ছাত্রসংখ্যা দেড়শো ছুঁইছুঁই। প্রথম ব্যাচ সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। পড়ুয়াদের অধিকাংশই চটকল শ্রমিক পরিবারের সন্তান।

জগদীশবাবু বলেন, কিছু পরিকাঠামো তৈরি হলে মেয়েরা ভর্তি হতে পারবে।’’ স্কুল সভাপতি তথা পুর-কাউন্সিলর পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হিন্দিতে পড়ানোর জন্য কয়েক জন শিক্ষক প্রয়োজন। শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা চ‌লছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন