প্রতীকী ছবি।
সিসিক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে এ বার চন্দননগরে পরপর পাঁচ দোকানে চুরি করল দুষ্কৃতীরা।
শুক্রবার গভীর রাতে শহরের জ্যোতির মোড় এলাকায় শাটার-তালা ভেঙে যে পাঁচ দোকানে চুরি হয়, তার মধ্যে দু’টি সোনার দোকান, তিনটি কাপড়ের। এলাকার চোর-কেপমারদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ তুলছিলেন বহু ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ। ফের চুরির ঘটনায় তাঁদের উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষ করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। তদন্তকারীদের ধারণা, রাতে পুলিশের টহলদার গাড়ি চলে যাওয়ার ফাঁকে দুষ্কৃতীরা কাজ হাসিল করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জিটি রোড লাগোয়া সোনার দোকান দু’টির বাইরে সিসিক্যামেরা লাগানো রয়েছে। দুষ্কৃতীরা সেই ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেয়। তারপর শাটার ভেঙে ঢুকে দু’টি দোকান থেকেই সোনা-রুপোর গয়না, হিরের আংটি এবং নগদ টাকা হাতিয়ে নেয়। তিনটি কাপড়ের দোকানেরও তালা ভাঙে দুষ্কৃতীরা। সেখান থেকে দামি কাপড় হাতায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, রাত দেড়টা নাগাদ লোডশেডিং হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শীতের রাত বলে কেউ গুরুত্ব দেননি। শনিবার সকালেও বিদ্যুৎ না-আসায় তাঁরা বেরিয়ে দেখেন, ট্রান্সফর্মারের একটি যন্ত্রাংশ নামানো। তার পরেই পাঁচটি দোকানে চুরির বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে। এ থেকেই সকলের ধারণা, দুষ্কৃতীরা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাজ হাসিল করে। একই ধারণা পুলিশেরও।
ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ ব্যবসায়ী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁদের মধ্যে একটি সোনার দোকানের মালিক সুশোভন কর্মকার বলেন, ‘‘আমাদর দোকানের সিন্দুকটা দুষ্কৃতীরা খুলতে পারেনি। আলমারির সব কিছু নিয়ে গিয়েছে।’’ আর একটি সোনার দোকানের মালিক সৌমেন অধিকারী বলেন, ‘‘আমার দোকানের আলমারি, সিন্দুক দু’টোই খোলা ছিল। মনে হচ্ছে দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় কয়েকজন ছিল।’’
চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। চন্দননগরের বিভিন্ন এলাকায় রাতে টহলদারি চলে। বাজার এলাকাগুলিতে নজরদারির বিশেষ ব্যবস্থার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’’
কয়েকদিন আগেই শহরের হাটখোলা এলাকার একটি সোনার দোকান থেকে গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছিল দুই মহিলা। তার মাসপাঁচেক আগে উত্তর ২৪ পরগনার দুই মহিলা কেপমার খদ্দের সেজে ঢুকে একটি সোনার দোকান থেকে বেশ কিছু গয়না নিয়ে গাড়ি করে চম্পট দেয়। পরে ফের একই কায়দায় অন্য দোকানে হানা দিতে এসে ধরা পড়ে। ‘চন্দননগর স্বর্ণকার ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক উজ্জ্বল দত্ত বলেন, ‘‘শহরের বেশ কিছুদিন ধরে সোনার দোকানগুলিকে দুষ্কৃতীরা নিশানা করছে। কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি দোকানে চুরি হল। প্রশাসন এখনই কোন পদক্ষেপ না-করলে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। মনে হচ্ছে নিজেদেরই রাত-পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
শুক্রবার রাতেই আরামবাগ শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাদলকোনায় প্রাচীন সিংহবাহিনী মন্দিরেও চুরি হয়। সেবাইত সুব্রত যশের অভিযোগ, মন্দিরের মূল দরজার তিনটি তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা দু’টি রুপোর সিংহাসন, রুপোর পৈতে, পিতলের বাসন এবং প্রণামী বাক্স ভেঙে নগদ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে মন্দিরে দু’বছরে তিন বার চুরি হল। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।