প্রস্তুতির লেশমাত্র নেই সাঁকরাইলে

গত কয়েকদিন ধরে জেলা জুড়ে চলছে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা। উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, বাগনান উদয়নারায়ণপুর, আমতা, জয়পুর, ডোমজুড়, পাঁচলা, জগৎবল্লভপুর সর্বত্র পদযাত্রা, মিছিল, ঘরোয়া সভা করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এইসব দৃশ্য আপাতত বিরল সাঁকরাইলে।

Advertisement

নুরুল আবসার

সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০০:৩০
Share:

২১ জুলাই ধর্মতলার সমাবেশকে সফল করতে যখন হাওড়া গ্রামীণ জেলা জুড়ে প্রচারের ঝড় তুলছেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা, সেই সময় অন্য ছবি সাঁকরাইলে। এখানে কোনও প্রস্তুতি সভাই হয়নি। দেখা যায়নি পদযাত্রা বা ছোটখাটো সমাবেশও। সাঁকরাইল বিধানসভাকেন্দ্র তৃণমূল নেতা কর্মীদের একাংশের দাবি, দলের ভিতরে এ নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ জমা হয়েছে।

Advertisement

গত কয়েকদিন ধরে জেলা জুড়ে চলছে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা। উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, বাগনান উদয়নারায়ণপুর, আমতা, জয়পুর, ডোমজুড়, পাঁচলা, জগৎবল্লভপুর সর্বত্র পদযাত্রা, মিছিল, ঘরোয়া সভা করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কিন্তু এইসব দৃশ্য আপাতত বিরল সাঁকরাইলে।

গত লোকসভা নির্বাচনে সাঁকরাইল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে আছে ২১ হাজার ভোটে। কিন্তু বেশ কিছু পঞ্চায়েতে তৃণমূল পিছিয়ে গিয়েছে বিজেপির থেকে। মাশিলা, সাঁকরাইল, বাণীপুর ১, বাণীপুর-২ এই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ফল খুবই খারাপ। বিশেষত, বাণীপুর-২-এ তো তৃণমূলের ফল তো বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সাঁকরাইলের এক য় নেতা বলেন, ‘‘২১ হাজার ভোটৈ আমরা এগিয়ে আছি, এই আত্মতুষ্টিতে ভুগলে মুশকিল। বিজেপি ভাল সংগঠন তৈরি করেছে। চোরাস্রোত যে কখন ভাসিয়ে দেবে, সেটাই চিন্তার। এই অবস্থায় ২১ জুলাইকে সামনে রেখে ওই পঞ্চায়েতেগুলিকে চাঙ্গা করা যেত। কিন্তু তার তো কোনও লক্ষণ নেই। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কী হবে বুঝতে পারছি না।’’

Advertisement

সাঁকরাইলের ঠিক পাশের কেন্দ্র হল দক্ষিণ হাওড়া। এই বিধানসভাকেন্দ্রটি হাওড়া শহরে হলেও এর অধীনে আছে সাঁকরাইল ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত। পাঁচপাড়া, দুইল্যা, ঝোড়হাট, থানামাকুয়া—এই চারটি পঞ্চায়েতে কিন্তু ২১ জুলাইয়ের প্রচারের কাজ চলছে জোরকদমে। রবি ও সোমবার দিনভর প্রচার চলে।

কেন এমন হাল?

দলের স্থানীয় নেতা কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বিধায়ক শীতল সর্দারের নিষ্ক্রিয়তাই এর জন্য দায়ী। তিনি শুধু বিধায়কই নন, এই বিধানসভাকেন্দ্রে দলের সভাপতিও। কিন্তু পছন্দের লোককে নিয়ে কাজ করাতে গিয়ে বাকিদের কার্যত বসিয়ে দিয়েছেন। তৈরি হয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

সাঁকরাইলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়েই এখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়েছিল। প্রার্থী হতে না পেরে অনেকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের পরেও এখানে পর পর দু’দিন দলের দু’টি গোষ্ঠী দক্ষিণ সাঁকরাইলে একই জায়গায় পৃথকভাবে রক্তদান শিবির করে।

এই বিধানসভাকেন্দ্রের বাসিন্দা তথা জেলা তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি অরূপেশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি বিধায়ককে বলেছিলাম, অন্তত একটা প্রস্তুতিসভা ডাকুন। তিনি বলেছিলেন হবে। কিন্তু কিছুই তো হয়নি। তবে আশা করছি, সব ঠিক
হয়ে যাবে।’’

তবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো করে শেষ মুহূর্তে পথে নেমেছে সাঁকরাইল বিধানসভাকেন্দ্র সংখ্যালঘু সেল। আজ, বুধবার চাঁপাতলায় একটি প্রস্তুতিসভার আয়োজন করেছে তারা। সেলের বিধানসভাকেন্দ্র সভাপতি রায়হান খান বলেন, ‘‘কী করব, কেউ কিছু করছে না। আমাদেরই এগিয়ে আসতে হল। তবে আমরা
সবাইকে ডেকেছি।’’

গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় অবশ্য শেষ দিনের জন্য আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের সমাবেশ সফল করার জন্য নিচুতলার নেতা কর্মীরা কাজ করছেন। আমিই জয়পুরে প্রস্তুতি সভা করেছি। ফল ঠিক সময়ে দেখা যাবে।’’

বিধায়ক শীতল সর্দারের অবশ্য দাবি, তিনি প্রাণপাত পরিশ্রম করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বসে থাকার লোক নই। আর আমি নিষ্ক্রিয়? ও তো
নিন্দুকদের অপপ্রচার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন