প্রতীকী ছবি।
যেন ভূত দেখলাম!
আমার ঘরে, আমারই বিছানায় এসি-পাখা চালিয়ে নিশ্চিন্তে নাক ডাকছে ও কে!
বছর দশেক সাংবাদিকতা করছি। বেশ কিছু বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে বাড়ি ফিরে দোতলায় নিজের ঘরে গিয়ে আলো জ্বালতেই চমকে গেলাম। কখনও এত অবাক হইনি। বছর তেরোর অচেনা ছেলেটা এল কোথা থেকে? বাড়ির কেউ কিছু তো বলল না!
চমক আরও অপেক্ষা করছিল। অনেক ডাকাডাকির পরে ঘুম ভাঙল ছেলেটির। তার পরে যা বলল, এমন সহজ স্বীকারোক্তিও কখনও শুনিনি। ‘‘এসেছিলাম চুরি করতে। খুব খিদে পেয়েছিল। ফ্রিজ খুলে খাবার খেতেই ঘুম পেয়ে গেল। তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’’
শ্যামলা ছেলেটা আমার ছেলের চেয়ে মেরেকেটে এক বছরের বড় হবে। পরনে জিনস্, সাধারণ টি-শার্ট। কোঁকড়ানো চুল। দেখে মায়া হল। পুলিশ ডাকলাম। কিন্তু কোনও অভিযোগ দায়ের করিনি। কিছু তো চুরি যায়নি। বাচ্চাটা হয়তো ভুল করে ফেলেছে। পুলিশ এসে আটক করে ওকে থানায় নিয়ে যায়। সত্যি বলছি, একরত্তি ছেলেটার কীর্তি সারা জীবন মনে থাকবে আমাদের সকলের।
আমার বাড়ি পান্ডুয়া স্টেশন রোডে। পেশাগত প্রয়োজনেই ফিরতে রাত হয়। মঙ্গলবার যখন ফিরি তখন রাত ১২টা। রাত হয় বলে স্ত্রী আমার খাবার একতলায় খাওয়ার-ঘরে ঢাকা দিয়ে রেখে ঘুমোতে চলে যায়। মঙ্গলবার টেবিলে খাবারের থালা খালি দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। ফ্রিজ খুলে দেখি খেজুরের বাক্স খালি, দু’টি মিষ্টি কম, ঠান্ডা জলের বোতল নেই। স্ত্রীকে ডাকি। ছেলে এবং আমার বৃদ্ধা মাও উঠে পড়েন। কেউ কিছু বলতে পারছিল না। তার পরে দোতলায় নিজের ঘরে যেতেই ওই দৃশ্য!
আমার দোতলার ছাদ এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। সেখান দিয়ে যে কেউ নামতে পারে। ছেলেটি জানায়, রাত ১১টা নাগাদ কার্নিস বেয়ে ওই পথেই সে ঢুকেছে। তবে, আলো জ্বলতে থাকায় প্রথমে নীচে নামার সাহস পায়নি। আমার ঘরের পাশেই লুকিয়ে বসেছিল। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ও নীচে নেমে খাবার খায়। তার পরে আমার ঘরে গিয়ে নিজের মোবাইল চার্জে বসিয়ে, আমার ছেলের খেলনা নিয়ে খেলতে খেলতেই ঘুমিয়ে পড়ে!
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ছেলেটির বাড়ি পান্ডুয়ারই খন্যানের পূর্বপাড়ায়। তার বাবা কাঠমিস্ত্রি। জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি পুলিশকে জানিয়েছে, সে আগে চুরি করেনি। জিনিসপত্র নিয়ে ভোরের ট্রেনে পালানোর মতলবে ছিল। ঘুমিয়ে পড়াই কাল হল। পুলিশ ছেলেটির বাড়ির লোককে খবর দিয়েছে।
একটা শিক্ষা হল আমার। ভাবছি, একটি খেলনা কিনে ছেলেটিকে দিয়ে আসব।