হাসপাতালে ঢোকার পরিচয়পত্র না থাকায় তাঁকে ঢুকতে বাধা দেন কর্মী। সেই অপরাধে তাঁদের মারধর ও হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল কাউন্সিলরের ভাইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবারই কাউন্সিলরের ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে। বিধাননগরে দলীয় কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যায় করলে দলে যে কোনও নেতারই রেহাই নেই সেই প্রসঙ্গ তুলে মঙ্গলবারই তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ দোলা সেন বলেছেন, ‘‘তৃণমূলে আমাদের কারও চাকরি পাকা নয়। ফাউল হলেই দলনেত্রীর কাছে হলুদ কার্ড বা লাল কার্ড দেখতে হতে পারে। তাই আমরা যত বড় নেতাই হই না কেন, জানবেন সব সময় খুব টেনশনে থাকি। কখন বাদ চলে যাব, ঠিক নেই।” তার পরেও বুধবার এমন ঘটনায় হুগলি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব যথেষ্ট অস্বস্তিতে।
ভাইয়ের গ্রেফতার হওয়া নিয়ে কাউন্সিলর পুতুল ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে গিয়ে রাজনৈতিক গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হলাম। ওই রাতে আমার ভাই যদি এ রকম অন্যায় ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তা হলে পুলিশ তখনই তাকে গ্রেফতার করল না কেন। তা ছাড়া ঘটনার সময়ও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তবে অত সহজে আমাকে দমানো যাবে না।’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। যদি কেউ এই ধরনের অন্যায় কাজ করে, দল তাদের কখনওই রেয়াত করবে না। আইন আইনের পথে চলবে।’’ তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালের ঘটনায় বিএমওএইচ কাউন্সিলারের ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে সঠিক তদন্ত করে আসল রহস্য উদঘাটিত হোক।’’
ঠিক কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তারকেশ্বর পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পুতুল ভট্টাচার্যের বাবা সোমেশ্বর ভট্টাচার্য মঙ্গলবার রাতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ নিয়ে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বুধবার ভোর রাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ সোমেশ্বরবাবুর ছেলে পার্থ চক্রবর্তী বাবাকে দেখতে হাসপাতালে যান। কিন্তু হাসপাতালে ঢোকার পরিচয়পত্র না থাকায় কর্তব্যরত কর্মী নেপাল হাজারি তাঁকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন। অভিযোগ, কাউন্সিলরের ভাই বলে পরিচয় দেওয়ার পরেও ঢোকার অনুমতি না দেওয়ায় নেপালবাবুকে মারধর শুরু করেন পার্থবাবু। এমনকী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগও ওঠে পুতুলদেবীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। কর্তব্যরত কর্মীরা অন্যদের ফোন করে খবর দিলে অভিযুক্ত হাসপাতাল ছেড়ে পালান। পুলিশ হাসপাতালে তদন্তে আসে। হাসপাতালের তরফে বিএমওএইচ পার্থবাবুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ পার্থবাবুকে বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেফতার করে।
বিএমওএইচ রঞ্জন দে বলেন, ‘‘রাতে বৈধ পরিচয়পত্র না দেখালে হাসপাতালে কাউকেই ঢুকতে করতে দেওয়া হয় না। হাসপাতাল কর্মী সে কথা জানালেও তাঁকে মারধর করেন কাউন্সিলরের ভাই। হাসপাতালেও ভাঙচুর চালান। সেই অভিযোগই করা হয়েছে।’’
প্রহৃত নেপালবাবুর কথায়, ‘‘পরিচয়পত্র দেখাতে না পারায় আমি ওঁকে ভিতরে ঢুকতে মানা করলে তিনি হঠাৎই আমার উপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করেন। বর্হিবিভাগেও ভাঙচুর চালান। আমি সহকর্মীদের ডাকলে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।’’