সিআইডি তদন্তের দাবি স্ত্রীর

পুরনো শত্রুতায় দিলীপ খুন, অনুমান

নিহতের স্ত্রী, ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রিতু সিংহ স্বামীর হত্যা-রহস্যের কিনারায় রবিবার সিআইডি তদন্তের দাবি তুললেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর উপরে আগে হামলার কথা বিধায়কের মাধ্যমে পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভরসা থাকবে কী করে?’’

Advertisement

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ

ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০০:২৪
Share:

প্রশ্নোত্তর: দিলীপের স্ত্রী ও পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত করছে রেল পুলিশ। সাহায্য করছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু ব্যান্ডেলের তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম খুনের তদন্তে পুলিশের উপরে ভরসা করতে পারছে না নিহতের পরিবার।

Advertisement

নিহতের স্ত্রী, ব্যান্ডেল পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রিতু সিংহ স্বামীর হত্যা-রহস্যের কিনারায় রবিবার সিআইডি তদন্তের দাবি তুললেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বামীর উপরে আগে হামলার কথা বিধায়কের মাধ্যমে পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভরসা থাকবে কী করে?’’

শনিবার দিলীপ খুনের পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারও। তিনি অভিযোগ করেন, এর আগেও একাধিক বার দুষ্কৃতীরা দিলীপকে মারার চেষ্টা করেছিল। তিনি পুলিশ কমিশনার, চুঁচুড়া থানার আইসি, ব্যান্ডেল ফাঁড়ির ইনচার্জকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। পুলিশ কমিশনার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। ওই রাতেই বদলি করা হয় চুঁচুড়া থানার আইসি নিরুপম ঘোষ এবং ব্যান্ডেল ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপশ্রী সেনগুপ্তকে। চন্দননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, নিরুপমবাবু বারাসতে ডিআইবি-তে বদলি হচ্ছেন‌। তাঁর পরিবর্তে চুঁচুড়া থানার দায়িত্বে আসছেন কালিম্পং থানার আইসি অরিজিৎ দাশগুপ্ত। চুঁচুড়া-সহ হুগলি জেলার বিভিন্ন থানায় তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ব্যান্ডেল ফাঁড়ির ইনচার্জ হচ্ছেন সাব-ইনস্পেক্টর শের আলি মণ্ডল। তিনি চন্দননগর থানায় কর্মরত ছিলেন।

Advertisement

ব্যান্ডেলের নেতাজি পার্ক এলাকায় দিলীপদের দোতলা বাড়ি। কাছেই জিটি রোডের ধারে একটি আবাসনে ফ্ল্যাটও রয়েছে। পরিবারের লোকেরা জানান, রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের কাঁকিনাড়ায় টেকনিক্যাল বিভাগের কর্মী বছর চল্লিশের দিলীপ সাধারণত ‌ব্যান্ডেল থেকে সকাল ৯টা ১২ মিনিটের ট্রেন ধরে নৈহাটিতে যেতেন। সেখানে ট্রেন বদলে কাঁকিনাড়া। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া সেরে কারও মোটরবাইকে চেপে স্টেশনে যেতেন। ফিরতেন দুপুরে।

শনিবারেও সকাল ন’টা নাগাদ তিনি কাজে বের হন। এক যুবক তাঁকে মোটরবাইকে স্টেশনের কাছে নামিয়ে দেন। প্ল্যাটফর্মে ওঠার সময় রেললাইনের উপরেই দুই দুষ্কৃতী ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ থেকে তাঁর মাথায় গুলি করে পালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা তাঁকে অনুসরণ করছিল। দু’জন হামলা চা‌লায়। এক জন লাগোয়া রাস্তায় মোটরবাইকে অপেক্ষা করছিল। ‘অপারেশন’ সেরে তারা ওই বাইকে চেপে চম্পট দেয়।

রাতে ব্যান্ডেল জিআরপি থানায় বিজু পাসোয়ান, অর্জুন সিংহ ওরফে লাড্ডু এবং সঞ্জয় মিশ্র নামে এলাকার তিন জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রিতুদেবী। তাঁর দাবি, তিন জনেই বিজেপি কর্মী। গত ২৩ মে তারা বোমা, পিস্তল নিয়ে দিলীপের উপরে হামলা চালায়। পরেও হামলা হয়। খুনের হুমকি দেওয়া হয়। তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, বিজু ইমারতি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে দিলীপের আপত্তিতে সুবিধে করতে পারছিল না। তা ছাড়া, দিলীপের জন্যই বিজু তৃণমূলে ভিড়তে পারেনি। সেই রাগেই সে দিলীপকে খুন করে। তদন্তকারীরাও মনে করছেন, পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন।

রেল পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তারা পলাতক। খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপ, একাধিক লোকের একই উদ্দেশ্যে অপরাধ ঘটানো এবং অস্ত্র আইনের ধারায় তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। রিতুদেবী বলেন, ‘‘ও জনপ্রিয় ছিল। বেআইনি কাজে বাধা দিত। ওর জন্য বিজুরা প্রভাব বিস্তার করতে পারছিল ন‌া। তাই খুন করল। ওদের কঠোর সাজা চাই। রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির এই গুন্ডামির মোকাবিলা করব।’’

শনিবারেই হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ঘটনার জন্য তোলাবাজি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছিলেন। একই দাবি বিজেপির ওবিসি মোর্চার রাজ্য সভাপতি স্বপন পা‌লেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন