টাঙ্গির কোপে তৃণমূল কর্মী খুন আরামবাগে

গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে মধুরপুর গ্রামে তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ মুক্তার শেখকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন মফিজুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০২:১৬
Share:

শোকার্ত: নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন দিলীপ যাদব (ইনসেটে শেখ মফিজুল)। ছবি: মোহন দাস

দোকানে তিন পড়শির সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলেন তিনি। বেঞ্চ থেকে তাঁকে টেনে নামিয়ে রাস্তায় ফেলে প্রথমে টাঙ্গির কোপ, তারপরে বাঁশ-লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে তিনটি মোটরবাইকে আসা অন্তত ১০ যুবক।

Advertisement

শনিবার সন্ধ্যায় আরামবাগের হরিণখোলা বাজারে শেখ মফিজুল (৬৫) নামে আক্রান্ত ওই তৃণমূল কর্মীকে হামলাকারীদের হাত থেকে স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা উদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ আরামবাগ হাসপাতালে তিনি মারা যান। এই খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ওই রাতেই তৃণমূলের হরিণখোলা অঞ্চলের নেতা পার্থ হাজারিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর এই ঘটনায় ফের হরিণখোলায় রাজ্যের শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বেআব্রু হয়েছে। যাতে অস্বস্তি বেড়েছে দলের জেলা নেতৃত্বের।

পুরশুড়ার (হরিণখোলা অঞ্চলটি আরামবাগ থানার অধীন হলেও পুরশুড়া বিধানসভা এলাকায় পড়ে) প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “দলীয় কর্মীকে কেন খুন হতে হল তা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বলবেন। আমি শুধু বলতে পারি, প্রশাসন এখনই ব্যবস্থা না-নিলে আরও অঘটন ঘটবে।” জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব এ দিন আমগ্রামে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়টা দলকে বলব। দল পর্যালোচনা করবে। নিহতের পরিবারটির পাশে দল সর্বতো ভাবে থাকবে।”

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, জখম অবস্থায় মফিজুল হামলাকারী হিসেবে কয়েকজনের নাম বলেছিলেন। তাঁর পরিবারের লোকেরা ওই দলেরই পার্থ হাজারি, তাইবুল হোসেন-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুরনো আক্রোশ থেকে এই ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। বাকি অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। ধৃত পার্থকে রবিবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ৬ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে মধুরপুর গ্রামে তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ মুক্তার শেখকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন মফিজুল। সপ্তাহখানেক আগে জামিন পেয়ে বাড়ি ফেরেন। অনেকেই মনে করছেন, মফিজুলকে খুন করে মুক্তার খুনের বদলা নেওয়া হল। অভিযুক্ত পার্থ হাজারিরা মুক্তারের অনুগামী ছিলেন।

কিন্তু কেন এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?

পুলিশ ও তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিণখোলা-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ চলছে দীর্ঘদিন। আগে মূলত বালিখাদ দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হতো। এখন বালিখাদ বন্ধ হওয়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে অশান্তি চলছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব কম চেষ্টা করেননি। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে ঘরছাড়াদের ফেরানো হলেও অশান্তি বন্ধ হয়নি। মুক্তারের পরে এ বার খুন হলেন মফিজুল।

মফিজুল খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তাঁর পড়শি তথা জ্যাঠতুতো ভাই শেখ মফিউদ্দিন। তিনি বলেন, “আমরা চা খাচ্ছিলাম। আচমকাই তাইবুলের ভাইরা তিনটিবাইকে এসে মফিজুলকে রাস্তায় নামিয়ে মারধর শুরু করল। মোটা লাঠি তো ছিলই, টাঙ্গিও ছিল। মাথায় কোপ মারে, ডান পা, ডান হাত ভেঙে দেয়। আমরা এবং ব্যবসায়ীরা কিছু বোঝার আগেই ওই সব ঘটে গেল।”

আগে কলকাতায় পাঁউরুটির দোকানে কাজ করতেন মফিজুল। তিন ছেলে, দুই মেয়ে এবং স্ত্রী রুকিয়া বেগমকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল। একসময়ে সিপিআই নেতা জয়নাল খানের অনুগামী ছিলেন মফিজুল। ২০১৬-তে তৃণমূলে যোগ দেন। রুকিয়া বলেন, ‘‘দলে তাইবুলদের বিরোধী লাল্টু খানদের সঙ্গে ও মিশত বলে তাইবুলরা খুন করল। আমাদের জমিজমা নেই। ছোট ছেলে আর ছোট মেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করুক দল।’’

রবিবার হরিণখোলা বাজার বন্ধ না থাকলেও ক্রেতারা ছিলেন না বললেই চলে। পুরো এলাকাই ছিল থমথমে। পুলিশ টহলদারি চলছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন