Suvendu Adhikari

হুগলিতে মানভঞ্জনের চেষ্টা তৃণমূল নেতাদের

জগৎবল্লভপুরের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজেদের ‘শুভেন্দু অনুগামী’ বলেই চিহ্নিত করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৭
Share:

রোষ: হুগলির কানাইপুরে জ্বলছে শুভেন্দু অধিকারীর নামে লেখা ফ্লেক্স। ছবি: দীপঙ্কর দে

মন্ত্রিত্ব-সহ কিছু পদ থেকে শুভেন্দু অধিকারী ইস্তফা দিতেই দুই জেলায় তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা তুঙ্গে উঠছে। সামনে আসছে নানা সমীকরণ। তৃণমূলের অনেকেই যে শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তা পরিষ্কার। ফের শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুর ও তারকেশ্বরের কিছু এলাকা এবং হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের মুন্সিরহাটে শুভেন্দুর সমর্থনে ‘দাদার অনুগামী’ নামে ফ্লেক্স-পোস্টার পড়েছে। হুগলিতে ‘ড্যামেজ-কন্ট্রোলে’ নেমেছে শাসক দল।

Advertisement

তৃণমূল শিবিরের খবর, হুগলির শুভেন্দু অনুগামী নেতাদের ফোন করে শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে মানভঞ্জনের পালা। নেতৃত্বের একাংশের দাবি, গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দলবদলের সম্ভাবনা বিশেষ নেই। ফলে, সংগঠনে চিড় ধরবে না বলেই তাঁরা মনে করছেন। দলের এক নেতা বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটের টিকিট বণ্টন এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতির কথা এখনই ধারণা করা মুশকিল। তবে এটুকু বলা যায়, হুগলিতে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখনই দল ছেড়ে যাবেন না। দলের এক প্রাক্তন বিধায়কের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। তিনি কী করবেন, তাঁর ব্যাপার। দল ভাবিত নয়।’’

এ দিকে, শনিবার ফের নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। খানাকুলে জনসভায় দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে জিতে অনেক ভোগ করেছে, তাদের শিক্ষা দেবেন তো? এমন শিক্ষা দেবেন, যাতে যে বলবে আমি অমুকের অনুগামী, তমুকের অনুগামী, সে যেন গ্রামে ঢুকতে না পারে।’’

Advertisement

কল্যাণ আক্রমণ করলেও জেলা নেতৃত্বের অনেকেই মনে করছেন শুভেন্দু ওজনদার নেতা। ফলে, জল্পনা বাড়ছে। কানাইপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আচ্ছালাল যাদব বলেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী জননেতা। তাঁর অনুগামী থাকা অস্বাভাবিক নয়।’’ জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী এখনও আমাদের দলের নেতা। ফলে, তিনি চলে গেলে কী হবে না হবে, বলার সময় আসেনি।’’ উত্তরপাড়ার বিধায়ক তথা জেলায় দলের অন্যতম মুখপাত্র প্রবীর ঘোষাল মনে করেন, শুভেন্দু তৃণমূল ছাড়লে দলে প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ‘‘মমতা পরবর্তী প্রজন্মে দলে শুভেন্দু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুখ। তিনি চলে গেলে দলের ক্ষতি হবে, এতে সংশয় নেই।’’ নেতারা যা-ই দাবি করুন, দলের অনেকেই শুভেন্দুর পথের পানে চেয়ে আছেন। ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’র বর্ষীয়ান নেতা তথা জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ সমীরণ মিত্র ইতিমধ্যেই পরিষ্কার সে কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, দল তাঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রশমনে কী পদক্ষেপ করে তা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

এর মধ্যে কানাইপুরে শুভেন্দুর সমর্থনে লাগানো ফ্লেক্স পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেখানকার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য ভবেশ ঘোষের দলবলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে ভবেশের দাবি, ‘‘কানাইপুরে কোনও দাদা অনুগামী করা চলবে না। বিরোধীরা চক্রান্ত করে এ সব করছে।’’

জগৎবল্লভপুরের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের একাংশ নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিজেদের ‘শুভেন্দু অনুগামী’ বলেই চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন পঞ্চায়েতের প্রধান, স্কুল সভাপতিও। তাঁরা জানান, শুভেন্দু অন্য দল করলে তাঁরা তাঁর সঙ্গে যাবেন। বিজেপিতে যোগ দিলে যাবেন না। জেলা জুড়েই এই মনোভাবের সন্ধান মিলেছে। তবে, গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে শুভেন্দু অনুগামী কেউ হয়েছেন কিনা, সে সংক্রান্ত কোনও খবর নেই। ফলে, এ নিয়ে কিছু ভাবছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন