এই বাতিস্তম্ভ ঘিরে বিতর্ক। ছবি:নিজস্ব চিত্র।
শহরের বিভিন্ন এলাকায় ৩৫টি আলোকস্তম্ভ বসানোর সিদ্ধান্ত নেন পুরসভা। এক একটি আলোকস্তম্ভের জন্য ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। ৯ মিটার লম্বা এই আলোকস্তম্ভে থাকছে ৬টি এলইডি আলো। ইতিমধ্যেই প্রায় ২০টি আলোকস্তম্ভ বসানো হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলির জন্যও গর্ত খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের আগে উলুবেড়িয়া পুরসভার এই কাজ নিয়ে শুধু বিরোধীরাই নয়, সরব হয়েছে খোদ তৃণমূল শাসিত পুরসভার কর্তাদেরই একাংশও। পুরকর্তৃপক্ষ অবশ্য বেনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সামগ্রিক কাজের উপরে কোনও টেন্ডার ডাকা হয়নি। শুধু একটি আলোকস্তম্ভ বসাতে দরপত্র চাওয়া হয়। একটি ঠিকাসংস্থা দর দেয়, তারা ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকায় একটি আলোকস্তম্ভ করে দিতে পারবে। সেই মতো পুরসভা ওয়ার্ক অর্ডারও দেয়। পরে ওই সংস্থাকেই বাকি আলোকস্তম্ভ বসানোর জন্য পৃথক পৃথকভাবে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, একটি আলোকস্তম্ভ বসানোর জন্য যদি ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা খরচ হয়, তা হলে ৩৫টির জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা। পুরো কাজটির জন্য যদি টেন্ডার করা হতো তা হলে এর থেকে অনেক কম টাকাতেও কাজটি করা যেত? পুর-কর্তৃপক্ষের যুক্তি, পুরো কাজটির জন্য দরপত্র ডাকতে হলে ই-টেন্ডার করতে হতো। তাতে অনেক সময় লাগত।
প্রসঙ্গত, সরকারি বা বেসরকারি— প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিয়ম হল, প্রথমে কোনও একটি কাজের পরিকল্পনা করা হয়। পরে কত টাকা খরচ হতে পারে সে বিষয়ে প্রাথমিক একটা হিসাব করা হয়। তারই ভিত্তিতে টাকা বরাদ্দ হয়। টেন্ডারের বিজ্ঞাপনে তার উল্লেখ থাকে। দরপত্র জমা দেওয়ার সময়ে ঠিকা সংস্থাগুলি বরাদ্দ অর্থের চেয়ে কম বা সমান বা কিছু শতাংশ বেশি টাকায় কাজটি করার প্রস্তাবও দিতে পারে। সুতরাং সময় নষ্টের যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা এক্ষেত্রে খাটে না বলে মনে করছেন কর্তাদের একাংশই। তাঁদের অভিযোগ, বরাদ্দ টাকার থেকে অনেক কমে আলোকস্তম্ভগুলি বসানো যায়।বিরোধীদের অভিযোগ, নিজের লোকেদের বেশি সুবিধা পাইয়ে দিতে বেনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে পুর-কর্তৃপক্ষ। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সাবিরুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কাজটি করা হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে। এ ব্যাপারে পুরসভায় বার বার আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাত্তাই দেননি।’’ একই অভিযোগ পুরসভায় তৃণমূল কর্তাদের একাংশের তরফ থেকেও।
পুরপ্রধান অর্জুন সরকার বলেন, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। সব কিছুই নিয়ম মেনেই হচ্ছে।’’