পূর্ত দফতরের জায়গা দখল করে তৈরি তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় ভেঙে ফেলার নোটিস দিয়েছিল প্রশাসন। অথচ ভাঙা তো দূরঅস্ত, ১৫ অগস্ট ঘটা করে সেই কার্যালয়ের উদ্বোধন হয়ে গেল। আরামবাগের তিরোল পঞ্চায়েতের নৈসরাইতে সোমবার ওই দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব।
নৈসরাই বাসস্টপ লাগোয়া প্রায় ৩০০ বর্গফুট জায়গা দখল করে ইটের গাঁথনি এবং টিনের ছাউনি দিয়ে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ ছিল স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতা মির চঞ্চল ও জাকির খানের বিরুদ্ধে। মির চঞ্চলের দাবি, “দলের অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল-সহ সমস্ত স্তরে জানিয়েই পূর্ত দফতরের অব্যবহৃত জায়গায় দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছি। মানুষের পাশে দাঁড়াতেই এই কার্যালয় নির্মাণ।’’ তৃণমূলের তিরোল অঞ্চল সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল অবশ্য বলেন, “ওখানে ছোটরা ক্লাব করেছে। ওরা তৃণমূলের পতাকা, ফেস্টুন দিয়ে সাজিয়ে থাকতে পারে। তবে ওটা দলীয় কার্যালয় নয়।’’
কী বলছে পূর্ত দফতর?
পূর্ত দফতরের (সাধারণ) সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় বলেন, “ওই দখল উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই তা ভেঙে দেওয়া হবে।’’
পূর্ত দফতর (সাধারণ) সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ জুলাই নৈসরাইয়ের ওই অবৈধ নির্মাণ সাত দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নোটিস পাঠিয়েছিলেন সহকারী বাস্তুকার। কিন্তু তার তোয়াক্কা না করে পাল্টা ২৭ জুলাই রাত থেকেই তৃণমূলের পতাকা-ফেস্টুনে মুড়ে দেওয়া হয় কার্যালয়। সে সময় মহকুমা পূর্ত দফতরের (সাধারণ) সহকারী বাস্তুকার নিরঞ্জন ভড় জানিয়েছিলেন, নোটিসের তারিখ অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে ওই বেআইনি নির্মাণ তা না ভাঙলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী সময়সীমা পেরিয়ে যায় গত ১ অগস্ট। তারপরেও এতদিন কেন তা ভেঙে ফেলা হয়নি? পূর্ত দফতরের তরফে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে দফতরের কর্মীদের একাংশ জানান, রাজনৈতিক কারণেই তা সম্ভব হয়নি।
তৃণমূলের স্থানীয় তিন পঞ্চায়েত সদস্য মমতাজ বেগম, লক্ষ্মীকান্ত সরেন এবং গোলাম আম্বিয়াদের অভিযোগ, “নিজেদের তৃণমূল বলে পরিচয় দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্রমাগত নষ্ট করে চলেছে কয়েকজন। গাছ চুরি থেকে পূর্ত দফতরের জায়গা দখল ছাড়াও বাজারে তোলাবাজি, মারধর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। নেত্রী দলে বিশৃঙ্খলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও আরামবাগের ক্ষেত্রে তা নেওয়া হচ্ছে না।’’
নৈসরাইয়ের ঘটনা নিয়ে আরামবাগ তৃণমূল ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী প্রথমে সেটি ক্লাব বলে দাবি করেছিলেন। এদিন অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে কোনওরকম দখলদারির বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যাঁরা মানবেন না, তাঁরা দলের কেউ নয়। পুলিশ এবং প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক”।