দু’দিন সাধারণ মানুষের ভোগান্তির পরে বাস ধর্মঘট উঠে গেল চুঁচুড়া মহকুমায়।
যাত্রী পরিবহণে বেআইনি গাড়ির রমরমার বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ তুলে বাস ধর্মঘটে নেমেছিলেন চুঁচুড়া মহকুমার বাস-মালিকেরা। শনিবার এক প্রশাসনিক বৈঠকে জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল হুগলিতে বাস-রুটে টোটো চলাচল বন্ধ এবং বেআইনি যাত্রী-গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন। এই আশ্বাস পাওয়ার পরে বাস মালিকেরা পরিবহণমনন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেও কথা বলেন। তার পরেই আজ, রবিবার থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন তাঁরা। কিন্তু বাস-মালিকদের অনেকেরই অভিযোগ, আগেও প্রশাসন এমন আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা বেশি দিন কার্যকর থাকেনি।
জেলাশাসক বলেন, ‘‘বাস-মালিকদের দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেআইনি গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘বাস-রুটে টোটো চলাচল বন্ধের জন্য অভিযান চালানো হবে। আইন ভাঙলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অজিত খাঁ অবশ্য জানান, পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর অনুরোধে আপাতত বাস ধমর্ঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। মন্ত্রী সোমবার তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য সময় দিয়েছেন। সমস্যা না মিটলে জেলা জুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘটের পথে যাবেন তাঁরা।
রুট ভেঙে চলা অটো, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ট্রেকারের ছাদে যাত্রী তোলা এবং সর্বোপরি টোটোর দৌরাত্ম্যে বাসে যাত্রী কমছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ তুলছিলেন জেলার বাস-মালিকেরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একাধিকবার প্রশাসন এবং পুলিশের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি, উল্টে দিনের পর দিন আরও সঙ্গিন হয়েছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু রুটে বাসের সংখ্যা কমেছে। দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রীদের।
এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার থেকে চুঁচুড়া মহকুমার সব ক’টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। চুঁচুড়া থেকে ছাড়া বহু বাস চন্দননগর মহকুমার নানা প্রান্ত ছুঁয়ে যায়। ফলে, এই মহকুমাতেও ধর্মঘটের প্রভাব পড়ে। বাস না পেয়ে ভোগান্তি বাড়ে যাত্রীদের। রাস্তায় বাস না-থাকায় একাধিক বার গাড়ি পাল্টে যাতায়াত করতে হয় নিত্যযাত্রীদের। সোমবার থেকে শ্রীরামপুর মহকুমাতেও অনির্দিষ্টকাল বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। তিন দিন বাদে ঈদ। বুধবার রথযাত্রা। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মরসুমে বাস-মালিকদের সিদ্ধান্তে চাপে পড়ে যায় জেলা প্রশাসন। তাই শনিবার সকালে জেলা পরিষদের সভাকক্ষে বাস-মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জেলাশাসক। উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি মেহবুব রহমান, অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) কৌশিক ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কোটেশ্বর রাও, ডিএসপি (ট্রাফিক) অরুণ মণ্ডল, আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সুজয় সাধু।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈঠকে বাস-মালিকেরা অভিযোগ করেন, প্রায় প্রতিটি বাস-রুটেই শ’য়ে শ’য়ে টোটো এবং পারমিটহীন অটো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ফলে, বাস চালিয়ে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। জেলাশাসক টোটো-সহ অন্য গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারার জন্য পুলিশকে কার্যত ভর্ৎসনা করেন। পরে বাস-মালিকদের তিনি ধর্মঘট তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। বেআইনি যাত্রী-গাড়ি চলাচল বন্ধে পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরেক অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
রঞ্জন দাস নামে এক বাস-মালিক বলেন, ‘‘বাসের জ্বালানি, কর্মী বা রক্ষণাবেক্ষণে যে খরচ হয়, দীর্ঘদিন ধরেই তা উঠছে না। জমানো টাকা খরচ করে বাস চালাতে হচ্ছে। এর পরেও উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের হয়তো বাস বেচে দিতে হবে।’’