বালি

গুলিতে নিহত ট্রাকচালক, প্রশ্নে পুলিশের টহলদারি

রাতের জাতীয় সড়ক যে আদৌ নিরাপদ নয়, ফের তার প্রমাণ মিলল। বুধবার সকালে বালির ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে এক লরিচালকের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের পরে সেখানে পুলিশি টহলদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে গাড়ির চালকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩৮
Share:

উইন্ডস্ক্রিনে রক্তের দাগ। বালিতে সেই ট্রাক। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের জাতীয় সড়ক যে আদৌ নিরাপদ নয়, ফের তার প্রমাণ মিলল।

Advertisement

বুধবার সকালে বালির ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে এক লরিচালকের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধারের পরে সেখানে পুলিশি টহলদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে গাড়ির চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, রাত বাড়লেই অরক্ষিত হয়ে পড়ে বালির দুই ও ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক। নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া টহলদার পুলিশের দেখা মেলে না। সেই সুযোগেই ওই এলাকা দুষ্কৃতীদের কাছে কার্যত মুক্তাঞ্চল হয়ে ওঠে। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে যখনই ঘটনাটি ঘটে থাক, ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির উইন্ডস্ক্রিনে রক্তের দাগ এবং লরি ও সেতুর রেলিংয়ের মাঝে কম্বল চাপা দেওয়া েদহ নিশ্চিন্দা থানার টহলদার পুলিশের চোখে পড়ল না কেন? এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ মাইতিপাড়া সাব-ট্রাফিক গার্ডের কর্মীরা লরিটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেওয়ার পরেই টনক নড়ে কর্তাদের।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের বামুনডাঙা সেতুতে একটি লরিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকর্মীরা। লরিটির সামনের কাচে ছিল রক্তের দাগ। পাশে পড়ে ছিল চালকের গুলিবিদ্ধ দেহ। ওই পুলিশকর্মীরাই নিশ্চিন্দা থানায় খবর দেন।

পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বলরাম সিংহ (৪০)। সালকিয়ার একটি পরিবহণ সংস্থার হয়ে কাজ করতেন। মঙ্গলবার লোহার পাইপ বোঝাই লরি নিয়ে গিয়েছিলেন জগদ্দলে। রাতে ফেরার সময়ে পরিবহণ সংস্থার মালিক বশিষ্ঠমুনি পাণ্ডেকে ফোনে সে কথা জানান। এক পরিবহণ ব্যবসায়ী গুড্ডু ঠাকুর বলেন, ‘‘বুধবার সকালে আলমপুর যেতে হবে শুনে বলরাম জানায়, রাতে জাতীয় সড়কেই থেকে যাবে। কিন্তু সকালে বারংবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেনি বলরাম।’’

পুলিশের অনুমান, ওয়ান শটারের গুলি বলরামের কপাল ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তবে লরিতেই তাঁকে খুন করা হয়েছে না অন্য কোথাও খুন করে বামুনডাঙা সেতুতে ফেলে যাওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সেতু থেকে নীচে রেললাইনে ফেলতে গিয়ে লরি ও সেতুর রেলিংয়ের মাঝে পড়ে যায় দেহটি। তার পরে কম্বল দিয়ে দেহটি ঢেকে পালায় দুষ্কৃতীরা।’’

কিন্তু অন্য লরিচালক ও স্থানীয়দের প্রশ্ন, ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে নিশ্চিন্দা থানা। ঢিল ছোড়া দূরত্বে সিসিআর সেতুতে রাতে পুলিশ থাকে। তা-ও সারা রাত কেউ কিছু জানতে পারলেন না কেন? পাশাপাশি, রাতে টহলদার পুলিশ ভ্যান কি বামুনডাঙা সেতুতে যায়নি? যদি গিয়ে থাকে, তা হলে রাস্তায় একটি লরিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও তো তাদের সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল।

পুলিশকর্তাদের অবশ্য যুক্তি, রাতে জাতীয় সড়কে মাঝে মধ্যেই লরি দাঁড় করিয়ে বিশ্রাম নেন চালকেরা। তাই হয়তো টহলদার পুলিশ লরিটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কিছু করেনি। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (উত্তর) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঠিক কখন ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে, ময়না-তদন্তের পরেই তা বোঝা যাবে। কিছু সূত্র মিলেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিক নয়। ওই এলাকায় টহলদারি যথেষ্টই রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন