ভাঙনের আশঙ্কায় চেঙ্গাইলের চককাশী ১ নম্বর কলোনি। ছবি: সুব্রত জানা।
চর অনেক আগেই চলে গিয়েছে গঙ্গার গর্ভে। জল এ বার ধাক্কা মারছে বাঁধে। ইতিমধ্যেই বাঁধের অনেকটা ভেঙে পড়েছে। দেখলে মনে হবে যেন কোদাল দিয়ে সমান করে কেউ চেঁছে নিয়েছে মাটি।
বর্ষা প্রায় হাজির। নদী আর বিঘৎখানেক এগোলেই উড়ে যেতে পারে বাঁধ। তখন নদীর জল সরাসরি ধাক্কা মারবে পাড়ে এবং ঢুকে পড়বে জনপদে। তাই বর্ষায় মুখে ঘরবাড়ি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন উলুবেড়িয়ার চেঙ্গাইলের চককাশী-১ নম্বর উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দারা। সেচ দফতরের কাছে অবিলম্বে তাঁরা পাকাপাকি ভাবে নদীবাঁধ মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন। সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই এলাকায় নদীবাঁধে ভাঙনের কথা শুনেছি। অবিলম্বে তা মেরামত করার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’
তবে, এই ভাঙন নতুন নয়। প্রায় কুড়ি বছর ধরে গঙ্গার এই বাঁধ ভাঙার সাক্ষী ওই কলোনির শ’পাঁচেক পরিবার। বহু বছর আগে ভিটেমাটি ছেড়ে যে মানুষেরা এখানে এসে সংসার পেতেছিলেন, গঙ্গার উদ্দামতায় তাঁরা ফের ঘরবাড়ি হারানোর আশঙ্কা করছেন। কেননা, চার আগেই ফের ভাঙন হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
এক সময়ে এই এলাকায় নদীর বিশাল চর ছিল। বাঁধ থেকে তা ছিল অন্তত পাঁচশো মিটার ভিতরে। নদীর উল্টো দিকে পড়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পূজালি। এক সময়ে পূজালিতে নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিলেও এ দিক অক্ষত ছিল। নদীর চরে ছেলেরা ফুটবল খেলত বলে স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ দাস, মহাদেব নাথ, সমরকুমার আদকেরা জানান। পূজালিতে নদীর পাড় পাকাপাকি ভাবে বেঁধে দেওয়ার পরে নদীর চোরাস্রোত চককাশীর দিক দিয়ে বইতে শুরু করে। ভাঙন শুরু হয় এ পাড়ে।
মঙ্গলবার ওই কলোনিতে গিয়ে দেখা গেল, বাসিন্দাদের চোখ-মুখে আতঙ্কের ছবি। প্রায় ৫০০ ফুট জুড়ে নদীবাঁধ এখানে হয়ে উঠেছে সংকীর্ণ। ঠিক যেন জমির আল। তাতেই জোরে ধাক্কা মারছে নদীর জল। বাঁধ কেঁপে উঠছে। বাসিন্দারা জানালেন, বাঁধের এখনকার অবস্থা দেখে বোঝাই যাবে না যে এক সময়ে এর উপর দিয়ে পণ্যবাহী ভারী ট্রাক চলাচল করত। দিলীপবাবু, মহাদেববাবুরা বলেন, ‘‘এখন এখান দিয়ে সাইকেলে যেতেও ভয় করে। কলোনির জমিতে তিল তিল করে ঘরসংসার গড়ে তুলেছি। ফের কি উদ্বাস্তু হব?’’ তাঁরা জানালেন, গত দু’মাস ধরে প্রতি অমাবস্যায় উঁচু হয়ে বান আসছে। তার ফলে বাঁধের আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
১ নম্বর কলোনির পাশেই পূর্ব দিকে শরৎ পল্লি। এত তীব্র না-হলেও নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে এখানেও। শরৎ পল্লির পূর্ব দিকে রয়েছে ২ নম্বর কলোনি। ১ নম্বর, ২ নম্বর কলোনি এবং শরৎ পল্লি— এই তিনটি এলাকা জুড়ে এক সময়ে ছিল একটি চটকল এবং তার আবাসন চত্বর। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে বন্ধ চটকলের জমিতেই গড়ে ওঠে এই তিনটি জনবসতি। ২ নম্বর কলোনিটি সেচ দফতরের নাজিরগঞ্জ বিভাগের অধীন। এই এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেচ দফতরের নাজিরগঞ্জ বিভাগ কয়েক বছর আগেই বাঁধ মেরামত করে। ফলে, এখানে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি।
শরৎ পল্লি সংলগ্ন নদীর পাড় এক সময়ে চটকল কর্তৃপক্ষই ইট দিয়ে বাঁধিয়েছিলেন। কিন্তু ভাঙনের জেরে বাঁধানো ইট তলিয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। ১ নম্বর কলোনিতে সে ভাবে কোনও মেরামতির কাজই হয়নি। বাঁধের উপরে শুধু বালির বস্তা ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বানের জলের তোড়ে সে সব তলিয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখানকারই।
দিলীপবাবু, মহাদেববাবুর আক্ষেপ, ‘‘কুড়ি বছর ধরে চর তলিয়ে যাচ্ছে। বাঁধ ভাঙছে। অথচ সেচ দফতর শুধু বাঁধ মেরামতির শুকনো আশ্বাসই দিচ্ছে। সেই কাজ আর কবে হবে?’’
সেচমন্ত্রীর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘এ বার পাকাপাকি ভাবেই কাজ হবে।’’