ডাক্তারের মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা

পুলিশ জানিয়েছে, সোমকের দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। অন্তত ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তেমনই জানা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে এক পুলিশকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষ বার সোমক তাঁর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৪
Share:

হাসপাতালের এই ছ’তলা ভবন থেকে পড়ে গিয়েই মৃত্যু হয় চিকিৎসক সোমক চৌধুরীর। —নিজস্ব চিত্র।

ধোঁয়াশা যেন কাটছে না!

Advertisement

পরিবার, সহকর্মী, এমনকী নিরাপত্তারক্ষীরাও যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা।
শুক্রবার নিয়মমাফিক কাজকর্ম চললেও হাসপাতালের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে কয়েকটি প্রশ্ন। আর বৈদ্যবাটীর ফ্ল্যাটে শুধুই সব হারানোর কান্না।

বৃহস্পতিবার রাত ন’টা নাগাদ ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় জুনিয়র ডাক্তার সোমক চৌধুরীর দেহ উদ্ধার হয়।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, জরুরি বিভাগের ছ’তলার ছাদ থেকে পড়ে মারা যান সোমক। প্রশ্ন উঠেছে, কর্তব্যরত ওই জুনিয়র ডাক্তার ছাদে উঠলেন কেন? তা হলে কি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, না কি এর পিছনে রয়েছে অন্য কিছু? পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে আত্মহত্যাই করেছেন সোমক।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমকের দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। অন্তত ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে তেমনই জানা গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে এক পুলিশকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শেষ বার সোমক তাঁর মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। মৃতের পকেট থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে চিঠির জনৈক মহিলা প্রাপককে ‘কর্তা’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি নিজেকে ‘গিন্নি’ বলে সম্বোধন করেছেন লেখক। এ বিষয়ে ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘চিঠিটি কার এবং কে কাকে লিখেছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ওই বিল্ডিংয়ের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তদন্তকারীদের দাবি, হাসপাতালে মৃতের বন্ধুরা জানিয়েছেন, ওই সন্ধ্যায় তাঁদের সঙ্গে বাইরে খেতে যাওয়ার কথা ছিল সোমকের। বেরোনোর আগেই তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। কথা বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়েন সোমক। ফোন শেষ হলে বন্ধুদের জানিয়ে দেন, তিনি খেতে যাবেন না। সোমক কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। তার জন্য মোবাইলের কল-রেকর্ড খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

এ দিন ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তাঁরা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপাশি জরুরি বিভাগের ছাদে গিয়েও সব খতিয়ে দেখেন। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, অন্য দিনের মতোই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা বাজতেই হস্টেল থেকে হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন সোমক। জরুরি বিভাগের উপরের তলায় সার্জারি বিভাগ। এ দিন তাঁর সহকর্মীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে স্বাভাবিক ভাবেই কাজ শুরু করেন সোমক। কোনও অবস্থাতেই মনে হয়নি, তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর এক সহকর্মী-বন্ধুর কথায়, ‘‘দেড় বছর ধরে ওকে চিনি। কোনও সমস্যা থাকলে নিশ্চয়ই জানতে পারতাম।’’ তদন্তকারীরা সোমকের পকেট থেকে ‘কর্তা-গিন্নি’ সম্বোধনের যে চিঠি পেয়েছেন, পুলিশকে ভাবাচ্ছে সেটাও। কোনও বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে কি ভুগছিলেন সোমক? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর ওই সহকর্মীর কথায়, ‘‘ওর কোনও বিশেষ বন্ধু ছিল বলে জানতাম না।’’ সার্জারি বিভাগের অধ্যাপকেরাও জানান, শান্ত স্বভাবের মেধাবী সোমক মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন, এটা তাঁরা মানতে নারাজ।

বৈদ্যবাটী স্টেশনের কাছে বাদামতলার একটি আবাসনে সোমকের পরিবার থাকে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। তার পরে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা চলছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বৈদ্যবাটীতে খুব কম যেতেন। কলেজ হস্টেলে থাকতেই পছন্দ করতেন। সোমকের বাবা সুবীর চৌধুরী গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আধিকারিক ছিলেন। মা শাশ্বতীদেবী গৃহবধূ। সোমক তাঁদের একমাত্র সন্তান।

সুবীরবাবু জানান, দুর্ঘটনাবশত ছাদ থেকে পড়েই ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘হয়তো ছেলে ধূমপান করতে উপরে উঠেছিল। শ্যাওলায় পা পিছলে পড়ে যায়। এর পিছনে অন্য কিছু নেই।’’ চম্পা সেন নামে এক আত্মীয়ার কথায়, ‘‘কালও তিনটে সার্জারি করেছিল। ও ঝাঁপ দিতে পারে না।’’ কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে পারে? চম্পাদেবীর বক্তব্য, ‘‘ঠিকঠাক তদন্ত হলে সবটা জানা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন