সরিয়ে নেওয়া যাবে না দমকল, তাণ্ডব বেলুড়ে

তবে শ্যামসুন্দরবাবুর মেয়ে পেশায় আইনজীবী মণিকা কালরা জানান, এ দিন কোনও আপত্তি না করেই ঘর ফাঁকা করে দিচ্ছিলেন দমকলকর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলুড় শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৮ ০২:০৮
Share:

বিশৃঙ্খলা: স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে হাতাহাতি মালিকপক্ষের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

আদালতের নির্দেশ ছিলই। সেই মতো ভাড়া বাড়িতে থাকা দমকলকেন্দ্র ফাঁকা করা হচ্ছিল। কিন্তু এলাকা থেকে তা সরানো যাবে না বলে দাবি তুলে রাস্তায় নামলেন স্থানীয়েরা। এর জেরেই বুধবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বেলুড় বাজার এলাকা। জখম হলেন মালিকপক্ষের দু’জন আইনজীবী। পরিস্থিতি সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ নামাতে হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এই ‘অশান্তি’র জেরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে জিটি রোড। শেষে এ দিনের মতো স্থগিত হয়ে যায় দমকলকেন্দ্র উচ্ছেদের প্রক্রিয়া।

Advertisement

ষাটের দশকে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে জিটি রোডের উপরে দোতলা বাড়ির একতলায় ১৭৪০ বর্গ ফুটের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চালু হয় ‘লিলুয়া ফায়ার স্টেশন’। সেখানে জায়গা এতটাই কম যে দমকলের একটি ইঞ্জিন রাস্তায় রাখতে হত। ভাঙাচোরা বাড়ির ওই ঘরটি খালি করার জন্য প্রায় ৩৩ বছর ধরে দমকল দফতরের অধিকর্তার সঙ্গে মামলা চলছিল মালিক শ্যামসুন্দর কালরার। তিনি জানান, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ হাওড়া আদালতের নির্দেশ নিয়ে দমকল কেন্দ্রটি খালি করতে গিয়েছিলেন নাজিরখানার লোকজন ও মালিকপক্ষের আইনজীবীরা। তবে নিয়ামনুযায়ী উচ্ছেদের বিষয়ে স্থানীয় থানাকে আগাম চিঠি দিয়ে জানাতে হলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলেই দাবি পুলিশকর্তাদের।

তবে শ্যামসুন্দরবাবুর মেয়ে পেশায় আইনজীবী মণিকা কালরা জানান, এ দিন কোনও আপত্তি না করেই ঘর ফাঁকা করে দিচ্ছিলেন দমকলকর্মীরা। হাওড়ার ডিভিশনাল ফায়ার অফিসার প্রশান্ত ভৌমিকের উপস্থিতিতে দু’টি দশ চাকার লরিতে সব মালপত্রও তোলা হচ্ছিল। ইঞ্জিনটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাওড়ায়। মণিকাদেবীর অভিযোগ, আচমকাই কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা এসে বাধা দেন। পরে তাতে সামিল হন স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও। তিনি বলেন, ‘‘একটা বিশাল দল এসে চড়াও হয়েছিল। আইনজীবীদের মেরে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে। তবে পুলিশকে বারবার ফোন করলেও আসেনি।’’ এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ যখন খবর পেয়েছে তখনই এসে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, মণিকাদেবী আদালতের লোকজন ও আইনজীবীদের নিয়ে দমকল কেন্দ্রে গিয়ে উচ্ছেদের নোটিস সেঁটে দেন। দমকলকর্মীদের অভিযোগ, কোনও সময় না দিয়েই তৎক্ষণাৎ তাঁদের ঘর ছেড়ে মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। এর পরে কর্মীরা বিষয়টি প্রশান্তবাবুকে জানালে তিনিও চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আদালতের নির্দেশ দেখিয়েছিলেন। তাই আমরা মালপত্র সরাতে বাধা দিইনি।’’ এর মধ্যে এলাকায় উচ্ছেদের খবর রটতেই ক্ষেপে যান স্থানীয়েরা। খবর পেয়ে চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলর কৈলাস মিশ্র। তাঁর নেতৃত্বে শুরু হয় বিক্ষোভ। তিনি বলেন, ‘‘কাউকে না জানিয়ে আচমকা দমকল কেন্দ্র সরালে কোনও বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সামাল দেবে কে?’’

স্থানীয়দেরও বক্তব্য, বেলুড় ও লিলুয়া জুড়ে প্রচুর কারখানা। তাই সেখান থেকে দমকল কেন্দ্র উঠে গেলে সমস্যা হবে। কারণ, বালির এক প্রান্তে যে দমকল কেন্দ্রটি আছে, তা বেলুড় ও লিলুয়ার ঘিঞ্জি এলাকায় পৌঁছনোর আগেই আগুন ভয়াবহ আকার নেবে। হাওড়া দমকল কেন্দ্রটি প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। এ দিন বিক্ষোভকারীরা জোর করে লরি থেকে মালপত্র নামাতে গেলে মণিকাদেবীদের সঙ্গে বচসা বাধে। তা থেকেই শুরু হয় ধস্তাধস্তি, হাতাহাতি। তাতে মাথা ফাটে আইনজীবী ফারহান গফ্‌ফরের। আহত হন আর এক আইনজীবী পূজা পাণ্ডে।

শ্যামসুন্দরবাবুর দাবি, ভাড়া নিয়ে সমস্যা হওয়ায় ১৯৮৫-তে তাঁরা দমকল দফতরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, ‘‘২০০৪-এ আমরা জিতে যাই। কিন্তু পরের বছর ওঁরা কলকাতা হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ আনে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সেই স্থগিতাদেশ তুলে নেয় আদালত। হাওড়া আদালত থেকে ওই ঘর ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’’ এত বছর ধরে মামলা চললেও বিপজ্জনক বাড়িতে কী ভাবে দমকল কেন্দ্রটি চলছিল, তা নিয়ে সদুত্তর মেলেনি দমকলকর্তাদের কাছে। তবে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা কোনও নোটিস পাইনি। কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন