সুমিত সাসপেন্ড, স্বস্তি উত্তরপাড়ায়

উত্তরপাড়ার এহেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অবশেষে শাসকদল ব্যবস্থা নেওয়ায় সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে। স্বস্তিতে তৃণমূলের একাংশও। 

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২০
Share:

সুমিত চক্রবর্তী

শহরে কান পাতলেই তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। কোনওটা মারধরের, কোনওটা ভাঙচুরের, কোনওটা হুমকি বা হেনস্থার। শোনা যায় দুষ্কৃতী-সংস্রবের অভিযোগও। অনেক ভুক্তভোগী তাঁর বিরুদ্ধে থানাতেও গিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কখনও তাঁকে ধরেনি!

Advertisement

উত্তরপাড়ার এহেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অবশেষে শাসকদল ব্যবস্থা নেওয়ায় সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তিতে। স্বস্তিতে তৃণমূলের একাংশও।

নবমীর রাতে দলবল নিয়ে একটি ক্লাবে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে ওই তৃণমূল কাউন্সিলরকে শুক্রবার সাসপেন্ড করেছে দল। সুমিতের কাজকর্মের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, দল আরও আগে ব্যবস্থা নিলে সুমিতের এত বাড়বাড়ন্ত হত না।

Advertisement

মধ্য চল্লিশের সুমিত শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ২০০০ সালে তিনি তৃণমূলের টিকিটে প্রথমবার কাউন্সিলর হন। ওই বছরই স্থানীয় কংগ্রেস নেতা উজ্জ্বলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেনস্থা ও মারধরের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। এর পরে কখনও শালিমারে সিটু অফিসে হামলা, কখনও ক্লাবে হামলার অভিযোগ ওঠে সুমিত ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে।

কয়েক বছর আগে এক যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনাতেও তাঁর নাম জড়ায়। বছর দশেক আগে প্রোমোটারি ব্যবসাও শুরু করেন সুমিত।

শহরবাসীর অনেকেরই অভিযোগ, কাঁচা টাকা হাতে আসতে থাকায় সুমিত বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নিজেকে দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ভাবতেন। তাই প্রোমোটারি ব্যবসায় বারে বারে অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও প্রভাব খাটিয়ে তিনি পার পেয়ে যান। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার সুমিতের আচরণে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

পূর্ত দফতরের আপত্তি সত্ত্বেও সুমিত সম্প্রতি বালিখালে একটি দলীয় কার্যালয় খোলেন বলে অভিযোগ। ওই কার্যালয়টি স্থানীয় বিধায়ক উদ্বোধন করেন। তৃণমূলেরই একাংশ মানছে, দলের কিছু নেতার মদতেই সুমিতের বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত নবমীতে ক্লাবে হামলার ঘটনায় দল ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু কেন দেরি? জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব শুধু বলেন, ‘‘যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দল নিয়েছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সুমিতের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগের কথা এখন শোনা যাচ্ছে, আগে ততটা জোরালো ছিল না। তেমন হলে দল আগেই ব্যবস্থা নিত।’’

পুলিশ কী বলছে? উত্তরপাড়ার থানার দাবি, আগের কোনও ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর হয়নি। যে সব অভিযোগ এসেছিল, পরে তা প্রত্যাহার হওয়ায় আইনি মান্যতা পায়নি।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, ‘‘থানা ব্যবস্থা নেয়নি, এমন অভিযোগ উঠলে জেলা পুলিশের কর্তাদের কাছে সরাসরি অভিযোগ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু এসেছিল কিনা, তা খোঁজ নিয়ে দেখব। ক্লাবে হামলার ঘটনার তদন্ত চলছে।’’

বিরোধীরা মনে করছে, ক্লাব-কাণ্ডে সুমিতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দলের উপায় ছিল ছিল না। কারণ, স্থানীয় লোকজন এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন যে সুমিতকে প্রহৃত হতে হয়। মহিলারাও তাতে সামিল হন। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা, বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যে একটা বিশৃঙ্খল দল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। উত্তরপাড়া তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের শহরে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত লজ্জার। ওই কাউন্সিলর এলাকার নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।’’

নানা অভিযোগ উঠলেও সুমিত অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, ‘‘সংবাদমাধ্যম নয়, দলকে বক্তব্য জানাব। নেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন