শুকিয়ে যাচ্ছে তরমুজ গাছ, ক্ষতির মুখে চাষি

গোঘাট-১ ব্লকের বালি ও কুমুরশা অঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে ক্ষতির আশঙ্কায় তরমুজ চাষিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গোঘাট শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:২২
Share:

গোঘাট-১ ব্লকের বালি ও কুমুরশা অঞ্চলের ১০টি গ্রামের প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে ক্ষতির আশঙ্কায় তরমুজ চাষিরা।

Advertisement

গত ১৭ বছর ধরে মহকুমার অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসাবে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত তরমুজ চাষ নিয়ে এ বার বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। প্রথমে গাছ ও পরে ডগা শুকিয়ে যাচ্ছে তরমুজের। যার ফলে বৃন্ত থেকে খসে যাচ্ছে অপুষ্ট তরমুজ। এদিকে গরমেই ভরা মরসুম তরমুজের। ফলে এমন বিপদের মুখে পড়ে ফসল বাঁচাতে মরিয়া চাষিরা উদ্যানপালন দফতরের বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়েছেন।

কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, মহকুমায় উদ্যানপালন দফতর থাকলেও সেখানে গিয়ে কোনও আধিকারিককেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাঁরা নিজেরাই নিজেরাই ওষুধ প্রয়োগ করে ফসল বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। উপায় না দেখে কেউ কেউ কৃষি দফতরের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু তাতেও ফসলের রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আরামবাগ মহকুমা কৃষি আধিকারিক সজল ঘোষ বলেন, “যদিও আনাজ এবং ফল চাষ ২০১৩ সাল থেকে উদ্যানপালন দফতরের তত্ত্বাবধানে। তা সত্ত্বেও তরমুজ গাছে এমন রোগের জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এক গ্রাম থায়োফ্যানেট মিথাইল এক লিটার জলে আটা সহ মিশিয়ে সেই মিশ্রণ জমিতে স্প্রে করতে। এছাড়াও আরও ৬ রকম ছত্রাক নাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

তরমুজের রোগ নিয়ে উদ্যানপালন দফতরের হুগলি জেলা আধিকারিক মানসরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দফতরের পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। তবে শীঘ্রই বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’

১৯৭৮ সালে বন্যায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দ্বারকেশ্বর নদী গতিপথ বদলে গোঘাট ১ ব্লকের বালি অঞ্চলের জগৎপুর, বালি, দেওয়ানগঞ্জ, ছোট ডোঙ্গল, শ্যামবল্লভপুর, গোয়ালসারা, কলাগাছিয়া, লক্ষ্মীপুর, দিঘরা, কালতা এবং কানাইপুর দিয়ে বয়ে গিয়েছ। ফলে সেই বরাবর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বালির কয়েক ফুট স্তর পড়ে যায়। সেই বালিস্তর চাষিরা যতটা পেরেছেন সরিয়ে কৃষি দফতরের পরামর্শ অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে তরমুজ চাষ শুরু করেন। তার পর থেকে এই প্রথম এমন ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তরমুজ চাষিরা। বালি গ্রামের এক চাষি দেবীপ্রসাদ গুঁইয়ের অভিযোগ, “সমস্ত গাছেরই ডগা শুকিয়ে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যবারের তুলনায় দ্বিগুণ কীটনাশক খরচ করেও রোগ প্রতিরোধ করা যায়নি। উদ্যানপালন দফতরের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি দফতরের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও কাজ হচ্ছেনা।’’

একই অভিযোগ বালি গ্রামের শীতল সিংহ, কলাগাছিয়ার স্বপন মালিক, কুমুরশা পঞ্চায়েতের অমরপুর গ্রামের দিলীপ বেতালের। তাঁরা জানান, সাধারণভাবে বিঘা পিছু তরমুজের ফলন হয় প্রায় ৪০ কুইন্টাল। গড়ে দাম পাওয়া যায় কুইন্টাল প্রতি ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ন্যূনতম ২৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। চাষের সময় মাঘ-ফাল্গুন মাস। চাষের পর আড়াই মাসের মাথায় ফলন শুরু হয়। কিন্তু এ বার যা পরিস্থিতি তাতে চাষের খরচ উঠবে কি না তা নিয়েই আশঙ্কায় চাষিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন