রথটান: হুগলির মাহেশ ও গুপ্তিপাড়ায়। ছবি তুলেছেন প্রকাশ পাল ও সুশান্ত সরকার
প্রায় এক সপ্তাহ মাসির বাড়িতে কাটিয়ে উল্টোরথে নিজের বাড়ি ফেরার পালা জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার। সোমবার সারা দেশের মতোই হুগলিতেও পালিত হল উল্টোরথ।
মাহেশ, চন্দননগর এবং গুপ্তিপাড়ার রথের ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। মাহেশ ও গুপ্তিপাড়ার রথের বয়স যথাক্রমে ৬২১ ও ২৭৮ বছর। চন্দননগরের রথের বয়সও ২৫০ বছর। সোমবার উল্টোরথে কোনও রকম অশান্তি এড়াতে তিন জাগাতেই কড়া পুলিশি নজরদারি ছিল। উপস্থিত হয়েছিলেন জেলা পুলিশের কর্তারাও। মাহেশ ও চন্দননগরের রথ জিটি রোড ধরে এগিয়ে চলে।
এ দিন সকাল থেকে জিটি রোডে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। শ্রীরামপুরের বটতলা থেকে রিষড়া পর্যন্ত জিটি রোড বন্ধ রাখা হয়। চন্দননগর রথের জন্য চুঁচুড়ার খাদিনা মোড় থেকে বড় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও ছোট গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরপথে যাতায়াত করে। তালডাঙা থেকে জিটি রোডে যান চলাচলও বন্ধ থাকে। সেখান থেকে তালডাঙা থেকে জিটি রোড ধরে গঞ্জেরবাজার অর্থাৎ রথতলার উদ্দেশে রওনা হয়। গুপ্তিপাড়ার রথটি বাজারে মাসির বাড়ি থেকে বেরিয়ে মাঠ পেরিয়ে গঙ্গার ধার-ঘেঁষা মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছয়। শ্রীরামপুরের রথ জিটি রোড ধরে মাহেশের উদ্দেশে রওনা দেয়।
সকালের দিকে পূজাপাঠের মাধ্যমে রথের দড়িতে প্রথম টান পড়ে। সকালের দিকে হাল্কা বৃষ্টি হলেও বেলা বাড়তে রোদ ঝলমল আকাশে মানুষ বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ লেপমুড়ি দিয়ে তিন বিগ্রহকে রথে চাপানো হয়। বিগ্রহগুলিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে চলে বিশেষ পুজো। বেলা সওয়া চারটে নাগাদ রথের দড়িতে টান পড়ে।
এ দিন গঙ্গার ঘাটগুলিতেও পুলিশি টহলদারি ছিল চোখে পড়ার মতো। ড্রোনের সাহায্যেও নজরদারি চালানো হয়। একই রকমের ভিড় ছিল গুপ্তিপাড়ার রথকে কেন্দ্র করেও। চন্দননগরের বোড়ো দিঘির ধার ‘শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী পুজা কমিটি’র পক্ষ থেকে ভোগ বিতরণ করা হয়।
তবে এ বারের রথে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রির ঘটনা চোখে পড়েছে। এ দিকে রাজ্যের পর্যটন দফতরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন আশ্বাস দিয়েছিলেন যে রথযাত্রা শেষ হলেই এলাকায় একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হবে। ফলে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়েরা। গুপ্তিপাড়া ছাড়াও বাঁশবেড়িয়ার চুঁচুড়ার উল্টোরথ ছিল বেশ জাকজমকপূর্ণ।
উৎসাহ ছিল হাওড়াতেও। বাগনান রথতলায় রথের দড়ি ছোঁওয়ার জন্য কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়। বাগনানের খানজাদাপুরে ৩০০ বছরের পুরনো রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে মেলা। কুলগাছিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির পুরনো রথকে কেন্দ্র করে বহু মানুষের ভিড় হয়। একই ছবি দেখা যায় উলুবেড়িয়া কালীবাড়ির রথে। রথ চলে ডোমজুড়, আন্দুল-সহ বিভিন্ন এলাকায়।