কেন খুন, ধন্দে পুলিশ

আড়াই মাস পরে শনাক্ত নিখোঁজ কিশোরীর দেহ

মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই মাস। অবশেষে হাওড়ার আমতার পাত্রপোলের কাছে বেসরকারি একটি বিএড কলেজের সামনে থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত কিশোরীর পরিচয় জানতে পারল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে নিহত কিশোরীর নাম লক্ষ্মী রায়। তার বাড়ি আমতারই গগন এলাকায়। যদিও কী ভাবে এবং কেন তাকে খুন করা হল সে বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

মাঝে কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই মাস। অবশেষে হাওড়ার আমতার পাত্রপোলের কাছে বেসরকারি একটি বিএড কলেজের সামনে থেকে উদ্ধার হওয়া নিহত কিশোরীর পরিচয় জানতে পারল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে নিহত কিশোরীর নাম লক্ষ্মী রায়। তার বাড়ি আমতারই গগন এলাকায়। যদিও কী ভাবে এবং কেন তাকে খুন করা হল সে বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারা যায়নি।

Advertisement

বছর পনেরোর লক্ষ্মীর দেহ উদ্ধার করা হয় গত ১৭ অগস্ট রাতে। পরদিনই উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে দেহের ময়না তদন্ত হয়। প্রাথমিক রিপোর্টে চিকিত্‌সক জানান, গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করা হয়েছে ওই কিশোরীকে। ময়না তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু দেহ শনাক্ত না হওয়ায় তদন্তে বিশেষ সুবিধা করতে পারছিল না পুলিশ। যদিও দেহ উদ্ধারের সপ্তাহখানেক পরে লক্ষ্মীকে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আমতা থেকে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। কিন্তু জেরায় তার কাছেও কিছু জানতে পারা যায়নি। পরে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ দিকে দেহ শনাক্ত না হওয়ায় পুলিশ যখন হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, সে সময়েই গত ৫ নভেম্বর আমতার গগন এলাকার বাসিন্দা মনোজ রায়, হেমন্ত বাগ নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন আমতা থানায়। আমতা চৌরাস্তা জেলেপাড়ার বাসিন্দা হেমন্তকে পুলিশ অবশ্য প্রথমে ধরতে পারেনি। ২৪ নভেম্বর হেমন্ত বাড়ি ফিরলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তাকে জেরা শুরু করে পুলিশ। হেমন্ত পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীনই মনোজবাবু জানতে পারেন পাত্রপোলে যে কিশোরীর দেহ পাওয়া গিয়েছে সেটি তাঁরই নিখোঁজ মেয়ের।

Advertisement

মনোজবাবুর ভাই সরোজবাবু বলেন, “২৪ নভেম্বর হেমন্ত ধরা পড়ার পরে ২৬ নভেম্বর আমরা থানায় গেলে পুলিশ এক কিশোরীর সালোয়ার কামিজ এবং জুতো দেখায়। আমরা বুঝতে পারি ওগুলি আড়াই মাস আগে নিখোঁজ হওয়া আমার ভাইঝির।”

কিন্তু বাড়ির কাছে ঘটনা ঘটলেও কিশোরীর পরিচয় জানতে এত দেরি হল কেন? লক্ষ্মীর পরিবার সূত্রের খবর, সে মাঝেমধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে কয়েকদিন কাটিয়ে ফের ফিরে আসত। এবারও তা ভেবেই তাঁরা নিশ্চিন্ত ছিলেন। কিন্তু বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও খোঁঁজ না মেলায় সন্দেহ হয়, তাকে নিশ্চয় অপহরণ করা হয়েছে। এরপরেই হেমন্তের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, লক্ষ্মীর পড়াশোনা ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। বাড়িতেই সে থাকত। সরোজবাবু বলেন, “আমরা আগেই হেমন্তের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করেছিলাম। দেহ শনাক্ত করার পরে আমরা পুলিশের কাছে ফের অভিযোগ করি, হেমন্তই আমাদের মেয়েকে খুন করেছে। সঠিক তদন্তের বিষয়ে পুলিশ অফিসার আমাদের আশ্বস্ত করেন। কিছুদিন পরে শুনি হেমন্ত হাসপাতালে ভর্তি।”

পুলিশ জানিয়েছে, তাদের হেফাজতে থাকাকালীনই গত ৩০ নভেম্বর হেমন্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে। লকআপে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করছিল সে। তাকে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়।” যদিও হেমন্তর পরিবারের অভিযোগ পুলিশের মারেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

পুলিশের দাবি, জেরায় হেমন্ত জানিয়েছে তার সঙ্গে লক্ষ্মীর পরিচয় ছিল। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে গত ১৭ অগস্ট বিকেলে তার সঙ্গেই লক্ষ্মীকে আমতা বাসস্ট্যান্ডের কাছে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। ওই রাতেই লক্ষ্মী খুন হয়। তবে কেন তাকে খুন করা হল, সে প্রশ্নের উত্তরে জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে হেমন্তকে জেরার আগেই সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সুস্থ হলে ফের তাকে জেরা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন