ধানের দাম সে ভাবে না মেলায় এ বার খানাকুলের কেটেদল গ্রামের অনেক চাষিই ঝুঁকেছিলেন আলু চাষে। ফলনও ভাল হয়েছে। কিন্তু সে ভাবে দাম মিলছে না বলে তাঁদের ক্ষোভ ছিলই। এর মধ্যেই মঙ্গলবার গ্রামের আলুচাষি স্বপন কুণ্ডু (৫৫) আত্মঘাতী হওয়ায় সেই ক্ষোভের মাত্রা বাড়ল। আলুর দাম না পাওয়ার জেরেই স্বপনবাবু আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই এলাকার আলু চাষিরা।
এ দিন সকালে বাড়ির কাছেই একটি বাগানের গাছ থেকে স্বপনবাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আলুর দাম না পাওয়ার জন্য কয়েক দিন ধরেই স্বপনবাবু যে মনমরা ছিলেন তা মেনে নিয়েছেন তাঁর পরিবারের লোকজনও। স্বপনবাবুর স্ত্রী শিখাদেবী বলেন, “ডায়াবেটিসের জন্য আমাকে দিনে দু’বার ইনস্যুলিন নিতে হয়। তা নিয়ে স্বামী ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। তার উপর বস্তাপিছু (৫০ কেজি) মাত্র ১৫০ টাকা দরে আলু বিক্রি করে সমবায়ের ঋণ কী ভাবে শোধ করবেন, তা নিয়েও চিন্তায় ছিলেন। সে জন্যই হয়তো এমনটা ঘটালেন।” মৃতের ভাই শ্রীকান্তও বলেন, “আলুর দাম না মেলায় দাদা খুব হা-হুতাশ করছিল। ভাইপোরা কাছে থাকলে বা বৌদি সুস্থ থাকলে হয়তো এতটা অবসাদগ্রস্ত হতো না।”
চাষিদের আলুর দাম না পাওয়া নিয়ে খানাকুল-২ ব্লকের বিডিও অনুপকুমার মণ্ডল কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, “ব্লক কৃষি আধিকারিককে গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছি।” পুলিশ জানায়, একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপনবাবুর দুই ছেলে সৌমেন এবং সমরেশ মুম্বইতে সোনা-রুপোর দোকানে কাজ করেন। স্বপনবাবুর বিঘা চারেক জমি রয়েছে। ধানের দাম পাওয়া নিয়ে সংশয় থাকায় এ বার ‘কেটেদল সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি’ থেকে ৭৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ‘এস ওয়ান’ প্রজাতির আলু চাষ করেছিলেন ওই জমিতে। কিন্তু আলুর দাম পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ।
খানাকুল এবং আশপাশের বাজারে এখন আলু বিকোচ্ছে ৪-৫ টাকা কেজি দরে। গ্রামের খেত থেকে বস্তাপিছু (৫০ কেজি) ১৫০-১৩০ টাকা তাঁদের আলু বিক্রি করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ চাষিদের। তাঁরা জানান, বিঘাপিছু আলু চাষের খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। বিঘাতে ৮০ থেকে ১০০ বস্তা আলু মেলে। কিন্তু যা দর যাচ্ছে, তাতে বিঘাপিছু ৮ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। চাষিদের পক্ষে চঞ্চল কুণ্ডু বলেন, “সমবায়ের ঋণ শোধ করা তো যাবেই না, সংসার চলবে কী করে তা নিয়ে ভেবে আমরা কূল পাচ্ছি না। এ নিয়ে স্বপনবাবুও দুশ্চিন্তা করছিলেন।” রামনারায়ণ দে নামে আর এক চাষি বলেন, “ধার করে আলু চাষ করেছি। কিন্তু দাম কিছুতেই উঠছে না। সরকার এ ব্যাপারে নজর না দিলে আমাদের সর্বস্বান্ত হতে হবে। মনে হয় একই চিন্তায় স্বপনবাবু আত্মহত্যা করলেন।” কেটেদল সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার সমীর মণ্ডল বলেন, “স্বপনবাবু প্রতি বছরই ঋণ নিয়ে যথা সময়ে তা পরিশোধ করতেন। এ বার আলু চাষের জন্য ৭৪ হাজার টাকা এবং তার পরে বোরো চাষের জন্য ৩২ হাজার ৫০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কোনওটাই তেমন বড় অঙ্কের ঋণ নয়। কেন আত্মঘাতী হলেন বলতে পারব না। তবে, আলু চাষিরা দাম পাচ্ছেন না, এটা ঘটনা।”