তপন-হত্যা মামলা

খুনিরা অধরা মানে পুলিশই ব্যর্থ: হাইকোর্ট

পুলিশ যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিতে না-পারায় বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনে অভিযুক্ত পাঁচ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল নিম্ন আদালত। এই নিয়ে পুলিশকে তোপ দেগে কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার বলল, খুনিদের গ্রেফতার করতে না-পারাটা পুলিশেরই ব্যর্থতা। তপন-হত্যার তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে যে-মামলা হয়েছে, তার শুনানিতেই এই মন্তব্য করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share:

পুলিশ যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিতে না-পারায় বালির তৃণমূল নেতা তপন দত্ত খুনে অভিযুক্ত পাঁচ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল নিম্ন আদালত। এই নিয়ে পুলিশকে তোপ দেগে কলকাতা হাইকোর্ট শুক্রবার বলল, খুনিদের গ্রেফতার করতে না-পারাটা পুলিশেরই ব্যর্থতা। তপন-হত্যার তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে যে-মামলা হয়েছে, তার শুনানিতেই এই মন্তব্য করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালের বিভিন্ন মামলায় নিষ্ক্রিয়তা, দায়সারা কাজের জন্য উচ্চ আদালতে বারে বারেই তিরস্কৃত হয়েছে পুলিশ। বীরভূমের পাড়ুইয়ে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলকর্মী সাগর ঘোষের হত্যাকাণ্ডে সিট বা বিশেষ তদন্তদলের কাজ নিয়েও চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশের উপরে আস্থা হারানোর কথা বলেছিল হাইকোর্ট। এ দিন শাসক দলেরই এক নেতা খুনের মামলায় ফের তোপের মুখে পুলিশ।

বিচারপতি দত্ত এ দিন সরকারি আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ওই ব্যক্তি (তপনবাবু) যে খুন হয়েছেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্টেই তা পরিষ্কার। পুলিশ খুনের মামলার চার্জশিট পেশ করে কয়েক জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। কিন্তু নিম্ন আদালত রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তদের বেকসুর খালাস করে দিয়ে জানিয়েছে, তথ্যপ্রমাণ নেই। পুলিশি তদন্ত ত্রুটিপূর্ণ। তার পরেই বিচারপতির প্রশ্ন, চার্জশিট দিলেই কি পুলিশের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়? প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বার করা কি পুলিশের কর্তব্য নয়? তার পরেই বিচারপতি মন্তব্য করেন, খুনিরা অধরা মানে তো পুলিশই ব্যর্থ।

Advertisement

হাওড়া আদালতের বিচারক ৬ ডিসেম্বর তপন-হত্যা মামলার রায় দিতে গিয়ে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। বিচারক জানান, সিআইডি-র তদন্ত অসম্পূর্ণ। হাওড়া আদালতের বক্তব্য, ওই খুনের মামলায় রমেশ মাহাতো নামে এক দুষ্কৃতীকে মূল অভিযুক্ত করেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ জানাচ্ছে যে, ২০১১-এর ৬ মে রাতে বালি লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে তপনবাবুকে যখন খুন করা হয়, তখন রমেশ বন্দি ছিল হুগলি জেলে। আদালত প্রশ্ন তোলে, সিআইডি-র তদন্তকারীরা কী ভাবে এক বন্দিকে ওই হত্যাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে দেখিয়েছিলেন? কী ভাবেই বা রমেশকে চিহ্নিত করা হয়েছিল?

সরকারি আইনজীবী প্রদীপ রায়ের উদ্দেশে বিচারপতি দত্ত এ দিন বলেন, কোনও মামলার যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ তুলে আবেদনকারী যখন সিবিআই তদন্ত দাবি করেন, সরকারের তরফে জানানো হয়, রাজ্যের সংস্থা তদন্তে দক্ষ। কিন্তু তপন-হত্যার তদন্তের ক্ষেত্রে রাজ্য কী বলবে, তা সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান বিচারপতি দত্ত।

ওই তৃণমূল নেতা খুনে সিবিআই তদন্ত চেয়ে নিহতের স্ত্রী প্রতিমাদেবী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নিম্ন আদালতের রায়ের আগেই। বিচারপতি দত্তের আদালতেই সেই মামলার শুনানি হবে বলে ঠিক ছিল। বিচারপতি দত্ত এ দিন তপনবাবুর স্ত্রীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চান, নিম্ন আদালতের রায় ঘোষণার পরে তাঁর আদালত এই মামলার শুনানি শুনতে পারে কি না। মামলার তদন্ত নতুন করে হতে পারে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। বিচারপতি দত্ত জানান, নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কেউ উচ্চ আদালতে আপিল মামলা করতে পারে। সেটি আপিল মামলা হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা। বিকাশবাবু জানান, বিচারপতি দত্তের এজলাসে সিবিআই তদন্তের দাবি সংক্রান্ত মামলার শুনানি হতে বাধা নেই। এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক নথিও আদালতকে দেখান ওই আইনজীবী। বিচারপতি জানান, এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ ডিসেম্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন