জমির সমস্যায় যেখানে রাজ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, সেখানে চণ্ডীতলায় আইটিআই গড়তে ৩ একর জমি দান করলেন এক ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে জমি দানের সম্মতিপত্র জমা দিয়েছেন তিনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, চণ্ডীতলায় ওই পরিমাণ জমির বর্তমান দাম প্রায় ৭ কোটি টাকা। শরদ অগ্রবাল নামে ওই ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ছেলের স্মৃতিতেই তিনি ওই জমি দান করছেন। এক লপ্তে এতটা জমি পেলে সেখানে আইটিআই গড়ার কাজ অনেকটাই সহজ হবে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
চণ্ডীতলা-২ ব্লক অফিসের পিছনে অহল্যাবাঈ রোডের কাছেই প্রস্তাবিত আইটিআই-এর জন্য জমি দিতে চান শরদবাবু। এই রাস্তায় একদিকে যেমন হাওড়া, কলকাতায় যাতায়াত করা যায়, তেমনই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ অন্য জেলাতেও যাতায়াত করা যায়। ফলে কলেজটি তৈরি হলে যাতায়েতের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না বলেই প্রশাসনিক কর্তাদের অভিমত।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, রাজ্যে প্রতিটি ব্লকে আইটিআই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) তৈরি করা হবে। সেইমতো চণ্ডীতলায় ওই প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য জমি খোঁজা হচ্ছিল। হুগলি জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সুবীর মুখোপাধ্যায়, জেলা পরিষদ সদস্য সুরজিৎ মণ্ডল এ বিষয়ে শরদবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কারণ স্থানীয় ব্যবসায়ী শরদবাবু নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত। শরদবাবু তাঁদের জানান, আইটিআই তৈরির জন্য তিনি জমি দিতে চান। দিন কয়েক আগে জমি দানের বিষয়ে শ্রীরামপুরের বর্তমান মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদারের হাতে নিজের সম্মতিপত্র তুলে দেন শরদবাবু। দু’পক্ষের আলোচনায় স্থির হয়েছে, প্রস্তাবিত আই-টিআইয়ের একটি ব্লক শরদবাবুর মৃত ছেলে উদয়ের নামে করা হবে।
মহকুমাশাসক মৃণালকান্তি হালদার বলেন, “ওই জমি হস্তান্তরের সরকারি প্রক্রিয়া চলছে। শরদবাবুর উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” মহকুমা প্রশাসনকে শরদবাবু জানিয়েছেন, অহল্যাবাই রোড থেকে ওই জমিতে যাওয়ার জন্য যে রাস্তা তৈরি হবে, সেই অংশ উঁচু করার কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, বর্তমান সময়ে জমি সত্যিই একটা সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে আইটিআই তৈরির জন্য ওই ব্যবসায়ী যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয় শরদবাবু জানান, তাঁর দুই মেয়ে বিয়ের পরে বিদেশে থাকেন। ছেলে উদয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ পাশ করেছিলেন। দেশে ফিরে পৈতৃক ব্যবসা দেখছিলেন। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
শরদবাবুর আত্মীয়-পরিজন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলের অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন শরদবাবু। ঠিক করেন ছেলের স্মৃতিতে কিছু করবেন। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত। শরদবাবুর কথায়, “ছেলের স্মৃতিতে দান করা জমিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হলে বহু ছেলেমেয়ে শিক্ষালাভ করতে পারবে। এতেই আমার শান্তি।”
বিধানগরের বাসিন্দা শরদবাবু নিজেও বিদেশ থেকে এম টেক পাশ করেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। উত্তর ২৪ পরগনা ও হুগলিতে তাঁর বেশ কয়েকটি হোসিয়ারি কারখানা রয়েছে। চণ্ডীতলা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সন্টু রিট এবং জেলা পরিষদ সদস্য সুরজিৎবাবু বলেন, “এখানে এমন একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলে জায়গাটিরও মানোন্নয়ন ঘটবে। বহু ছেলেমেয়ে উপকৃত হবে।”
দুর্ঘটনায় মৃত্যু। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক মোটরবাইক আরোহীর। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম দেবাশিস বেরা (১৯)। বুধবার রাত ৯টা নাগাদ এগরা-কাঁথি রাস্তার তাজপুর ও গৌরপাহাড়ি বাসস্টপের মাঝে দুর্ঘটনাটি ঘটে। দেবাশিসবাবু এগরার মাঠশালিয়ার বাসিন্দা। এ দিন রাতে ভবানীচকগামী ওই মোটরবাইককে পিছন থেকে একটি লরি ধাক্কা মারে। মোটরবাইকে তিন জন ছিল। লরির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়।