দু’টি প্লাস্টিক প্যাকেটে মোড়া সেল্ফ লোডিং রাইফেলের ৪৯টি গুলি উদ্ধার হল জাঙ্গিপাড়ার অযোধ্যাপুর গ্রামের কানা নদীর সেতুর কাছে। শুক্রবার ভোরের ঘটনা। হুগলি জেলার এমন প্রত্যন্ত এলাকায় কী ভাবে ওই গুলি এল তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পুলিশ।
তদন্তকারীদের দাবি, এ দিন যে গুলি পাওয়া গিয়েছে, তা ৭.৬২ বোরের। গুলির গায়ে লেখা থেকে পরিষ্কার, তা ২০০৩ সালে মুম্বইয়ের অর্ডিন্যান্স কারখানায় তৈরি। সাধারণ অপরাধীরা ওই গুলি ব্যবহার করে না। সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যেরাই এসএলআরে ওই গুলি ব্যবহার করেন। তবে, মাওবাদীদের মধ্যেও ওই গুলি ব্যবহারের চল রয়েছে। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী জানান, ওই গুলিভর্তি প্যাকেট কী ভাবে ওখানে এল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ দিন ভোরে ওই সেতু পেরিয়ে চা-র দোকান খুলতে যাচ্ছিলেন তাপস দাস। সেতুর উপরে প্যাকেটটি পড়ে থাকতে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। পা দিয়ে সরিয়ে ভিতরে কী রয়েছে, তা দেখার চেষ্টা করেন তিনি। শেষমেশ হাল ছেড়ে দোকানে চলে যান। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই সেতু দিয়ে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন এক গ্রামবাসী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রূপা বাইন। প্যাকেটটি দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। প্যাকেটটি খুলে দেখা যায় গুলি। ভোরে ওই এলাকায় টহলরত পুলিশকে তাঁরা ঘটনার কথা জানান। এর পরে পুলিশ এসে প্যাকেট দু’টি উদ্ধার করে। খবর যায় রাজ্য পুলিশের কর্তাদের কাছেও।
ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ঘটনাস্থলে চলে আসেন এসডিপিও (শ্রীরামপুর) অর্ণব বিশ্বাস-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা। আর কোথাও কোনও গুলি পড়ে রয়েছে কি না, তা দেখতে ওই গ্রামে এবং কানা নদীর আশপাশেও তল্লাশি চলে। তবে, কোনও গুলি উদ্ধার হয়নি। তাপসবাবু বলেন, “প্যাকেটটা পা দিয়ে নাড়াচাড়া করার সময়ে মনে হয়েছিল ভিতরে নাটবোল্ট রয়েছে। পরে জানতে পারলাম গুলি। কী ভাবে এখানে এল কে জানে?” জেলা পুলিশ কর্তারা জানান, বাইরে থেকে ওই গুলি এল কি না, তা জানার জন্য এ রাজ্যের বিভিন্ন থানা এবং মহারাষ্ট্র-সহ কয়েকটি ভিন্ রাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। সিপিআই (মাওবাদী) দল তৈরি হওয়ার আগে যে মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি) ছিল, তাদের ডেরা ছিল জাঙ্গিপাড়া। এমসিসি পরে জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গিয়ে সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠন তৈরি হয়। সেই সংগঠন গঠনের এটা দশম বর্ষ। সেই জন্য নাশকতার পরিকল্পনা হয়েছিল কি না, পুলিশ তা-ও খতিয়ে দেখছে।