জলের দাবিতে অবরোধ হলে যাঁদের তা তুলতে যেতে হয়, সেই পুলিশদের আবাসন এবং থানা কার্যত নির্জলা হয়ে গিয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে জল না থাকায় ক্ষোভ জমেছে আবাসনের ৬২টি পরিবার এবং থানার অফিসার-কর্মীদের মধ্যে। পুরসভা ও বেসরকারি সেবা সংস্থার পাঠানো জলের গাড়ির উপরে ভরসা করে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলি।
এই ঘটনা ঘটেছে খোদ হাওড়া থানা ও সংলগ্ন পুলিশ আবাসনে। হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, থানা ও পুলিশ আবাসনে জল সরবরাহ হত মূলত আবাসনের মধ্যে পূর্ত দফতরের বসানো গভীর নলকূপ থেকে। কিন্তু দীর্ঘ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গভীর নলকূপটি ক্রমশ অকেজো হতে শুরু করে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ছ’মাস আগে থেকেই জলের সমস্যা শুরু হয়। এর মধ্যে দিন পাঁচেক আগে যে পাম্প দিয়ে জল তোলার পরে জলাধারে পাঠানো হত, সেটি যান্ত্রিক কারণে পুড়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ নির্জলা হয়ে যায় থানা এবং সংলগ্ন আবাসনটি।
জল না পাওয়ায় কার্যত হাহাকার পড়ে যায় থানার পুলিশকর্মী ও আবাসনের পরিবারগুলিতে। পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর শৈলেশ রাইকে ঘটনাটি জানানো হলে তিনি নিয়মিত পুরসভার জলের গাড়ি ও একটি বেসরকারি সেবা সংস্থার গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শনিবার হাওড়ার থানা সংলগ্ন ওই পুলিশ আবাসনে গিয়ে দেখা যায় একটি বেসরকারি সংস্থার জলের গাড়ির সামনে জল নিতে বালতি হাতে লাইন করেছেন বাসিন্দারা।
কনুজা বেগম নামে আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, “চারতলায় থাকি। প্রতিদিন এই ভাবে বালতি করে চারতলায় জল তোলা কি সম্ভব? পুলিশ বলে কি কোনও সমস্যার সুরাহা তাড়াতাড়ি করবে না সরকার?” একই প্রশ্ন আবাসনের অন্য বাসিন্দা শ্যামলী সরেনের। তাঁর ক্ষোভ, “গত কয়েক মাস ধরেই ভোগান্তি চলছিল। এখন একদম জল বন্ধ। এর পরেও কি সমস্যা মিটবে না?”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি আবাসনগুলি দেখভালের দায়িত্ব যে সরকারি সংস্থার সেই পূর্ত দফতরকে মাস ছয়েক আগেই পুলিশের পক্ষ থেকে এই জলের সমস্যার কথা জানানো হয়। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা গভীর নলকূপটি পরীক্ষা করে জানান, সেটির ‘ফিল্টার’ খারাপ হয়ে গিয়েছে এবং নতুন করে একটি নলকূপ তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রায় ১১ লক্ষ টাকার একটি খরচের প্রস্তাব তৈরি করেন জেলা পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা। প্রস্তাবটি পাঠানো হয় রাজ্য পূর্ত দফতরের কাছে। অভিযোগ, দীর্ঘ টালবাহানার পরে প্রস্তাবের ফাইলটি রাজ্য অর্থ দফতরে পৌঁছনোর পরে অর্থের অনুমোদন না মেলায় আটকে যায়। এরই মধ্যে পুলিশ আবাসনের গভীর নলকূপটাই অকেজো হয়ে পড়ে।
হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থকর্তা বলেন, “সরকারি নিয়ম মেনে ওই প্রস্তাবের ফাইল বিভিন্ন হাত ঘুরে অর্থ দফতরে গিয়েছে। সেখানে অর্থ মঞ্জুর হলেই কাজ শুরু হবে। ততদিন একটু সমস্যা হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই তা মিটে যাবে।”